৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| ১৯শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৮শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি| সকাল ৮:০৫| হেমন্তকাল|
শিরোনাম:
পাইকগাছায় তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতিবঞ্চিত প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবীতে মানববন্ধন পাইকগাছায় নারী স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে দুর্যোগ প্রতিরোধক সরঞ্জাম বিতরণ গফরগাঁওয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ফাত্তাহ খানের জনসমাবেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা কৃষকরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি- জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়কে স্বাগত জানিয়ে পাইকগাছায় বিএনপির আনন্দ মিছিল জামিনে বের হয়ে বাদীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে গফরগাঁওয়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল ত্রিশালে সোনার বাংলা ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

ঈশ্বরগঞ্জে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি: অভিযোগের শেষ নেই ঈশ্বরগঞ্জের ওসির বিরুদ্ধে

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, মার্চ ১২, ২০২৫,
  • 62 Time View

মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মো. ওবায়দুর রহমান। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কাকতালীয় ভাবেই পরিদর্শক (তদন্ত) থেকে পদোন্নতি পেয়ে তিনি হয়ে যান ওসি। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ থানায় ওসি হিসেবে যোগদানের পর থেকেই তার ত্বত্তাবধানে চলছে রমরমা গ্রেপ্তার-মামলা বাণিজ্য।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামানের নির্দেশনায় এবং ওসি (তদন্ত)
মো. ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। এতে অনেকেই গুরুত্বর আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছেন। তাদের একজন আরিশ আহমেদ (১৫)। আরিশ আহমেদের বাড়ি ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের কুশমাইল গ্রামে। সে ওই গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলামের ছেলে। আরিশের ডান চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। এখন সে আর ওই চোখে দেখতে পায় না।
আরিশ জানায়, তার চোখ, মাথা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ১৩টি ছররা গুলি লাগে। আরিশ বলেন,’ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশের ছুুরা গুলিতেই আমার এই অবস্থা হয়েছে। তার জন্য থানার তৎকালীন প্রতিটি পুলিশ সদস্যই দায়ী।

আরিশের বাবা আশরাফুল ইসলাম বলেন,’গুলিবিদ্ধ হয়ে আমার ছেলে একটা চোখে দেখতে পায় না। ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ওসি এবং ওসিসহ (তদন্ত) সকল পুলিশ সদস্য ঘটনার সাথে জড়িত ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়মনসিংহ মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ওয়ালিদ আহমেদ অলি বলেন,’আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফুলবাড়িয়া থানার তৎকালীন ওসি(তদন্ত) ওবায়দুর রহমান মোটেও ছাত্র-জনতার জন্য হেল্পফুল ছিল না। আওয়ামী দোসরদের সাথে নিয়ে ওবায়দুর রহমানের নেতৃত্বে ফুলবাড়িয়া থানা-পুলিশ গুলি চালিয়েছে। ৫ আগষ্টের পর তিনি কীভাবে পদোন্নতি পেয়ে ওসি হয়েছে বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। এনিয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবো। তবে ওসি ওবায়দুর রহমান জানান, এই ঘটনায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ বিষয়ে একটি মামলা চলমান, যেখানে তার নাম নেই। মামলাটির তদন্ত চলছে।

এখানেই শেষ নয়, ঈশ্বরগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে শুরু করে। চুরি-ছিনতাই, মাদক, জুয়া, কিশোরগ্যাং, অজ্ঞান পার্টি,ইভটিজিং এবং ধর্ষনের মতো অপরাধ বেড়ে যায়। কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না এসব অপরাধ। এতে উপজেলার বাসিন্দারা ভোগছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়। আর এসব কিছুর জন্য উপজেলাবাসী দায়ী করছেন থানার ওসি ওবায়দুর রহমানকে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওসি যোগদানের পর থেকে আওয়ামীলীগ নেতাদের গ্রেপ্তার এড়াতে মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করে চলছেন। মাদক, জুয়া, ধর্ষণ এবং হত্যা মামলার আসামিদের ধরে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন অথবা ৩৪ বা ৫১ ধারায় কোর্টে প্রেরণ করে মোটা অংকের টাকা বাণিজ্য করেন তিনি। আর ওসির এমন ঘুষ বাণিজ্যে নরমাল ধারায় কোর্টে প্রেরণ করার পর থানায় পুলিশ আসার আগেই আসামি বাড়িতে চলে আসে। যেকারণে ওসিকে প্রত্যাহার চান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার সাধারণ মানুষ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মাসে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় মোট ৭১ টি মামলা হয়েছে। যারমধ্যে ৩ টি হত্যা, ৪টি চুরি, নারী নির্যাতন ৯ টি, মাদক ১৫ টি, পুলিশ লাঞ্চিত ২ টি, অন্যান্য ৩৮ টি। তারমধ্যে জুয়া আইনে ৪০ জন,পুলিশ আইনে ৩৩ জন,পরোয়ানা মূলে-১০৫ জন এবং অন্যান্য ১০জনসহ মোট ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে গ্রেপ্তারকৃত প্রায় অর্ধেক আসামিদের কাছ থেকে অর্থনৈতিক বাণিজ্য করেছে ওসি।
এসব বাণিজ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো- উপজেলার জাটিয়া উচ্চ বিদ‍্যালয়ের নৈশপ্রহরী আরমান হোসেন (২৪) হত্যা মামলার আসামীদের না ধরে সাধারণ মানুষদের হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করেছে পুলিশ। চার জনকে আটকের পর ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে থানা থেকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ইউনিয়নের ২ কিশোরীকে ধর্ষণ ও আঠারবাড়ি পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র থেকে যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমানকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোটা অংকের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন
স্থানীয়রা।

অপরদিকে উপজেলা জুড়ে অনলাইন জুয়াড়ি ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। সেই অনলাইন জুয়াড়িদের ধরে এনে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থার্টি ফোর ধারায় চালান দিয়ে দিনের ভিতরই জামিনে আসার সুযোগ করে দেন ওসি। এমন অসংখ্য অভিযোগে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। থানায় দালালদের দৌরাত্ম্যে সেবাপ্রার্থীরা পড়ছেন বেকায়দায়। ওসির নিয়ন্ত্রণে থাকা দালালদের খপ্পরে থানায় সেবা নিতে আসা মানুষদের গুণতে হচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ সকল ঘটনার পর মানুষের জান-মালের নিরপত্তা নিশ্চিতে অনতিবিলম্বে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, গ্রেপ্তার বানিজ্য বন্ধে পুলিশকে তৎপর হওয়ার আহবান জানায় ছাত্র-জনতা।

ঈশ্বরগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে পৌর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক একে এম হারুন অর রশিদ হারুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতে আমাদের সকলের এখন ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান ওসি যেভাবে থানা পরিচালনা করছে এবং যেভাবে গ্রেপ্তার বাণিজ্য শুরু করছে এতে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে চলতে থাকলে আইনশৃঙ্খলার আরো অবনতি হবে।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান
এ উপজেলার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। চুরি-ছিনতাইয়ের রহস্য উদঘাটন ও ধর্ষণ মামলার আসামিসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তারে থানা-পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ