নরসিংদীর মনোহরদীতে মা-বাবাহীন এতিম দুই ভাইকে থাকার জন্য ঘর করে দিয়েছেন থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লা। আজ শুক্রবার নাঈম (১৪) ও আব্দুল্লাহ (১২) দুই ভাইয়ের হাতে নতুন পাকা ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন তিনি।
ঘর পাওয়া এতিম দুই ভাই উপজেলার চালাকচর ইউনিয়নের হাফিজপুর চাতল পাড়া গ্রামের মুকুল মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, আর্থিক অসচ্ছলতায় পরিবারের দুই ছেলে এবং স্ত্রী রেখে ১০ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মুকুল মিয়া।
তিন বছর আগে মরণব্যাধি ক্যানসার কেড়ে নিয়েছে তাদের মায়ের প্রাণ। মা-বাবা হারিয়ে যখন দুই ভাই দিশেহারা তখন তাদের ফুফু মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করে তাদের লালন পালন করেন। ভিক্ষা করে দুবেলা দুমুঠো ভাতের জোগাড় করতে পারলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না।
এক টুকরো জমি থাকলেও ঘর নির্মাণ করার কোন অবস্থায়ই ছিল না তাদের। এমন অসহায়ত্বের বিষয়টি জানতে পারেন যুগান্তরের পাঠক সংগঠন স্বজন সমাবেশের এক বন্ধু।
পরে স্বজন সমাবেশের অন্যান্য বন্ধুদের জানানো হলে নজরে আনা হয় হয় থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান, দানবীর ও শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লার। মানবিক বিষয়টি নজরে আসায় তাৎক্ষণিক ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
যুগান্তরের মনোহরদী প্রতিনিধি হারুন অর রশিদ জানান, দুই ভাইয়ের সমস্যার নিয়ে যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সভাপতি বাসেদুল আলম সরকার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করলে তারা এই বিষয়টা আব্দুল কাদির মোল্লার কাছে জানান।
দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লা ঘটনা শুনে একমাসের মধ্যে তাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। যেই কথা সেই কাজ।
এক মাস না পেরোতেই আজ শুক্রবার সেই এতিমদের জীর্ণ কুটিরের জমিতে আব্দুল কাদির মোল্লার অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি বেডরুম, কিচেন, বাথরুম ও বারান্দাসহ একটি সেমি পাকা ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হয়।
চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাছিবা খান। এসময় উপস্থিত ছিলেন মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, চালাকচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফখরুল মান্নান মুক্তু, যুগান্তরের উপজেলা প্রতিনিধি ও মনোহরদী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, স্বজন সমাবেশের মনোহরদী শাখার সভাপতি বাছেদুল আলম সরকার, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হারুন উর রশিদ প্রমুখ।
নতুন ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা এতিম দুই ভাই নাইম এবং আব্দুল্লাহ। চোখে ডেকেছে আনন্দ অশ্রুর বান। তাদের বুকে অনাবিল স্বপ্ন।
নতুন ঘর পেয়ে কেমন লাগছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়, ছোট ভাঙা কুঁড়েঘরে আমরা কোন রকম রাত্রি যাপন করতাম। স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি যে, আমরা ইটের একখানা নতুন ঘর পাবো। আব্দুল কাদির মোল্লা ইটের ঘর দিবেন। আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি ঘর পেয়ে। দোয়া করি আব্দুল কাদির মোল্লার জন্য।
এর আগে দানবীর আব্দুল কাদির মোল্লা সারাদেশে জমি আছে ঘর নেই এমন ৭৪টি পরিবারের মাঝে ঘর নির্মাণ করে দেন।