৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৩:০৬| শরৎকাল|

কির্সতং পাহাড়, রোমাঞ্চকর অনুভূতির

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, মে ১১, ২০২৩,
  • 382 Time View

গোলাম কিবরিয়া

কির্সতং পাহাড়ের অবস্থান বান্দরবানের চিম্বুক রেঞ্জে। কির্সতং নামটি এসেছে মূলত ‘কিরসা’ ও ‘তং’ শব্দ থেকে। ‘কিরসা’ হচ্ছে এক ধরনের ছোট পাখি। মারমা ভাষায় ‘তং’ অর্থ পাহাড়। কির্সতং পাহাড়ে ছোট ছোট পাখি উড়ে বেড়ায়। এই ছোট পাখি উড়ে বেড়ানো পাহাড়ের উচ্চতা দুই হাজার ৯৫০ মিটার।

এই পাহাড়টি ঘিরে রয়েছে একটি বন। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় পশুপাখি ও প্রাণী বসবাস করে। কির্সতং সামিট থেকে তিন্দুর পরিস্কার ভিউ পাওয়া যায়। সামিটের চারপাশে ঘন গাছপালার কারণে খুব ভালো ওয়াইড ভিউ পাওয়া যায় না।

মায়াবী সেই কির্সতং জঙ্গলের বেশিরভাগ জায়গাতেই সূর্যের আলো পৌঁছায় না। বিশাল গাছের ছাউনি দিয়ে ঘেরা বনটি এখনও বেশ বুনো রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বেশকিছু পাখির ডাক শোনা যায়, যেগুলো এখন বিলুপ্তপ্রায়।

 

বনের গাছগুলো দেখেই বোঝা যায়, এটি হাজার বছরের পুরোনো। আপনি যখন সেই হাজার বছরের পুরোনো জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাবেন, তখন অন্য রকম এক অনুভূতি হবে মনের মধ্যে। কিছুক্ষণ পরপর থেমে পায়ে, শরীরে লেগে থাকা জোঁক হয়তো হাত দিয়ে টেনে টেনে ছাড়াতে হবে। আর যদি শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি, তাহলে পুরো পরিবেশটাই বদলে যাবে। সাধারণ একটা পাহাড়ি জঙ্গল নিমেষেই হয়ে যাবে মায়াময়, অসম্ভব সুন্দর স্বর্গের টুকরো। বৃষ্টির কারণে পাহাড়ের মাটি হয়ে যেতে পারে ভয়ানক পিচ্ছিল। পা ফেলতে হবে সাবধানে। মাঝেমধ্যে এমন সব খাড়া অংশ পড়বে, তা পাড়ি দিতে হলে সতর্ক হতে হবে। একটু এদিক-ওদিকে পা দিলেই সোজা পাহাড়ের নিচে। যদি পথেই এত মায়া রেখে থাকে কির্সতং, তাহলে ওপরে কী মায়া আর সৌন্দর্যটাই না জমিয়ে রেখেছে!
যেভাযে যেতে হয় :

কির্সতং চিম্বুক রেঞ্জের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়। তাই ঢাকা থেকে চকরিয়া হয়ে আলীকদম দিয়ে ঢুকলেই সবচেয়ে ভালো হয়। আলীকদম থেকে অটো বা রিকশা নিয়ে পানবাজার যেতে হবে। পানবাজার থেকে বাইক বা জিপে করে যেতে হবে ১৩ কিলোমিটার পথ। ১০ কিলোমিটার পর একটি আর্মি ক্যাম্প রয়েছে, সেখান থেকে পারমিশন নিয়ে যেতে হবে। ১৩ কিলোমিটার থেকে ডানে নেমে মেনিকিউ পাড়া হয়ে মেনিয়াংপাড়া। মেনিয়াংপাড়ার ওপরেই রুংরাং পাহাড় অবস্থিত। রুংরাংয়ের ঠিক নিচেই অবস্থিত পারাও-খেমচংপাড়া। খেমচংপাড়া কির্সতংয়ের সবচেয়ে কাছের বসতি। কির্সতং সামিটের ক্ষেত্রে খেমচংপাড়াকেই বেজ ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই পাড়া থেকে কির্সতং পৌঁছতে দুই ঘণ্টা ৩০ মিনিট লাগে। হাঁটার গতির ওপর এই সময় কম বা বেশিও হতে পারে। সামিট শেষে খেমচংপাড়া থেকে মংগরপাড়া হয়ে ১৩ কিলোমিটার আসা যায়।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা :

পুরো ট্র্যাকেই রয়েছে অনেক আদিবাসী পল্লি। তাদের বাড়িতে ম্যানেজ করে থাকা যাবে। আলীকদম এরিয়ার আদিবাসীরা এখনও শহুরে কাউকে পেলে অতিথির চোখে দেখে। পাহাড়ি রান্না খেতে সমস্যা হলে তাদের কাছ থেকে চাল ও তরকারি কিনে নিজেরাই রান্না করে খেতে পারবেন। নিজেরা রান্না করে খেতে চাইলে তেল-মসলা ও প্রয়োজনীয় জিনিস আলীকদম বাজার থেকেই কিনে নিয়ে যেতে হবে। পাহাড়ে কোনো দোকান নেই। রাতে আদিবাসী পল্লিতেই থাকা যাবে। এর জন্য পাড়ার কারবারির সঙ্গে প্রথমেই কথা বলে নিতে হবে। সাধারণত প্রতিটি পাড়ার কারবারির বাড়িতেই অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা হয়।
কিছু সমস্যা ও সমাধান :

পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটলে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে যায়। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি সঙ্গে রাখতে হবে। সঙ্গে স্যালাইন, গ্লুকোজ থাকলে ভালো। অতিদুর্গম এরিয়া, তাই খাবার সোর্স কম। চাইলেই দোকান থেকে খাবার কিনে খাওয়া যাবে না। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া ভালো। হাঁটতে হাঁটতে রাত হয়ে গেলে কাছাকাছি কোনো পাড়া নাও পাওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁবু নিয়ে যেতে হবে।

ম্যালেরিয়াপ্রবণ এরিয়া, তাই ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক নিয়ে যেতে হবে। অফ রোডে ট্র্যাকিং করতে হবে। সে ক্ষেত্রে লোকাল গাইড (আদিবাসী ছেলে) সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়। প্রাকৃতিক কাজ সারার পর পানির সোর্স কাছাকাছি নাও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে টিস্যু নিয়ে যেতে হবে। পাহাড়ি ট্রেইল ধরে হাঁটা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই একটি ট্র্যাকিং স্টিক বেশ কাজের জিনিস। রাতে ট্র্যাক বা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার জন্য একটি হেডল্যাম্প আদর্শ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ