২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ৩রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি| রাত ৩:৩৪| হেমন্তকাল|
শিরোনাম:
ফুলপুরে অতিরিক্ত বালু বহনকারী ট্রাক আটক, জরিমানা আদায় গফরগাঁওয়ে  সিএনজি উল্টে পুলিশ সদস্য নিহত  কুড়িগ্রামে মরিয়ম চক্ষু হাসপাতাল ও সিডিডি’র যৌথ আয়োজনে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত পাইকগাছায় পাখি শিকারী আটক; জরিমানা ৫ হাজার ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে নান্দাইলে বিএনপি’র বিক্ষোভ মিছিল  এসিআই ইউআইটিএস স্টুডেন্ট চ্যাপ্টারের উদ্যোগে গনিত অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত বেলাব ইউনাইটেড হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পিঠা উৎসব গফরগাঁওয়ে গণঅধিকার পরিষদের মশাল মিছিল পাইকগাছায় বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবসের প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে শুরু হয়েছে দুই দিনের তথ্যমেলা

ঘাটাইলে পাকুটিয়া চামড়ার হাটে ধস

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, জুলাই ৩, ২০২৩,
  • 213 Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক :দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তর টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের পাকুটিয়া চামড়ার হাটে ধস নেমে এসেছে। ফড়িয়ারা যে দামে মফস্বল থেকে চামড়া কিনেছেন, তার অর্ধেক দামেও বিক্রি করতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বিগত ১৯৮১ সালে মূলত ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়ায় চামড়ার হাট প্রতিষ্ঠা করা হয়। চামড়া শিল্পকে ঘিরে সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবার চামড়ার হাট বসে। হাট বসানোয় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা বিশেষ ভূমিকা রাখেন। মধুপুর, গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে হাটটি গড়ে ওঠায় দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে পাকুটিয়া চামড়ার হাট বিশেষ পরিচিতি লাভ করে।

 

বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোরসহ ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা থেকে চামড়া বেচা-কেনা করতে ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্যানারি মালিক, বিভিন্ন কোম্পানীর এজেন্ট, বড়-বড় মহাজন, ঋষি, ফড়িয়াসহ মৌসুমী ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে এই হাট। প্রতি বছর ঈদুল আযহা’র সময় আরোও বেশি লোকজনের সমাগম ঘটে থাকে।

সরেজমিনে ঈদুল আযহা পরবর্তী রোববার প্রথম হাটে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। অন্য বছর কয়েক লাখ চামড়া আমদানি হলেও এবার ৫০ হাজারেরও কম চামড়া আমদানি হয়েছে। যে পরিমাণ চামড়া হাটে উঠেছে, সেগুলোও কেনার মতো ক্রেতা হাটে আসেনি। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা, নেত্রকোণা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কিশোরগঞ্জ থেকে ১০-১২টি কোম্পানীর এজেন্ট, ছোট-খাটো কয়েকটি ট্যানারির মালিক ও স্থানীয় কয়েকজন ক্রেতা ছাড়া বড় কোন কোম্পানীর মালিক বা এজেন্টদের চোখে পড়েনি। যে ক’জন ট্যানারি মালিক বা এজেন্ট হাটে এসেছে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার এ বছর চামড়া কেনার জন্য ব্যাংক লোন ছাড় করেনি। টাকার অভাবে তারা চামড়া কিনতে পারছেন না।

সরকার চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। স্থানীয়ভাবে চামড়া কিনতে হবে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বর্গফুট। ওই দামে ফড়িয়ারা চামড়া বিক্রি করছে না। চামড়া না কেনার কারণ হিসেবে তারা জানান, হাট থেকে চামড়া কিনে প্রত্যেকটি চামড়া প্রতি আরো অতিরিক্ত ২০০ টাকা খরচ হবে। এরমধ্যে ট্রান্সপোর্ট, লবণ, শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচও যুক্ত হবে। ফলে হাট থেকে কেনা চামড়ার দাম ঢাকায় সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি পড়বে।

হাটে আসা ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইউসুফ লেদার কর্পোরেশনের মালিক ইউসুফ হোসেন জানান, তিনি বেছে-বেছে মোটা ও প্রথম শ্রেণির গরুর চামড়া কিনতে এসেছেন। উল্টে-পাল্টে চামড়া দেখছেন ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সাথে দাম-দর করছেন। জামালপুরের মেলান্দ থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ী জগাই প্রতি চামড়ার দাম হাকছেন ১২০০ থেকে ১৪৫০ টাকা। চামড়া দেখাশোনা শেষে ইউসুফ হোসেন দাম বলছেন ৫০০ থেকে ৫৮০ টাকা।

বনিবনা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মফস্বল থেকে সংগ্রহ করা চামড়া জগাই বিক্রি করতে পারেননি। কালাম ট্যানারির এজেন্ট আহাম্মদ বাদশা, মঞ্জু ট্যানারির এজেন্ট দীন ইসলাম, হক ট্রেডার্সের এজেন্ট সাইদুল হক, মাসুদ ট্যানারির এজেন্ট ফরিদুজ্জামান, আরকে লেদার কোম্পানির এজেন্ট মাসুম মিয়াসহ বেশকিছু কোম্পানির এজেন্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা যে মাত্রায় দাম হাকছেন তাতে চামড়া কেনা সম্ভব নয়। তাদের বাজেটের চেয়েও দুই-তিনগুণ বেশি দাম হাকছেন ফড়িয়ারা।

অপরদিকে ফড়িয়া, খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা জানান, তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বা স্থানীয়ভাবে চামড়া সংগ্রহ করে প্রতিপিস চামড়ার পেছনে চামড়া ঝিলানো, লবণ, ট্রান্সপোর্ট, শ্রমিক ও নিজের পারিশ্রমিক ব্যয় হয়েছে। প্রতিপিস চামড়া বাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ হয়েছে অর্থাৎ পরতা পড়েছে গড়ে ৭৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে মহাজন ও ট্যানারি মালিক ও এজেন্টরা দাম বলছেন ৫০০ টাকা থেকে ৬৮০ টাকা। অনেকেই ২০০ থেকে ৬০০পিস করে চামড়া নিয়ে হাটে এসেছেন।

প্রতিপিস চামড়ায় লাভের পরিবর্তে ৯০ থেকে ২২০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। এমন আকাশ-পাতাল তফাৎ হলে চামড়া বিক্রি করা সম্ভব নয়। তারা জানান, এ ব্যবসায় সারাবছর উপার্জন করা সম্ভব হয় না। বুকভরা আশা নিয়ে ঈদুল আযহা’র দিকে চেয়ে থাকতে হয়। এ হাটে চামড়া বিক্রি করে কিছুটা লাভ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার আশায়। এ বছর লাভ তো দূরের কথা চামড়া এবার তাদের পথে বসাবে। তাদের অনেকে মানুষের কাছে ধার-দেনা করে বা সুদে টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছেন। এখন চামড়ায় যে ক্ষতি হচ্ছে- তাতে এ ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। সুদ ও ধার করা টাকা পরিশোধ করতে না পারলে গলায় রশি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই তাদের।

এদিকে পাকুটিয়ার চামড়ার হাটটি কয়েকজন মিলে ইজারা নিয়ে থাকেন। হাটের ইজারাদার হুমায়ুন ও রফিক জানান, চামড়ার বাজারে ধস নামায় তারাও বিপাকে পড়েছেন। চাহিদা মতো চামড়া আমদানি ও বেঁচা-কেনা না হওয়ায় তাদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, চড়া মূল্য দিয়ে হাট ইজারা নিতে হয়েছে। পক্ষান্তরে দিন-দিন মানুষ চামড়া ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে ভবিষ্যতে পাট শিল্পের মতোই চামড়া শিল্পও কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিয়া চোধুরী জানান, সারাদেশের মতো ঘাটাইলের পাকুটিয়ার হাটেও চামড়ার দামে প্রভাব পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকার চামড়া শিল্পকে রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। যেহেতু ঈদের পর প্রথম হাট একদিন বসেছে, তাই পুরো বিষয়টি নিয়ে হাট মালিক ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিস্তারিত আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ