মোঃ হাসানুর জামান বাবু, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম ব্যবসাকেন্দ্র বিপনীবিতান, চট্টগ্রাম শহরের প্রথম তৎকালীন সুন্দর বহুতল মার্কেট এটা তাই এটাকে বিতনী বিতান নামের চেয়ে নিউমার্কেট নামেই বেশি পরিচিতি। দেশ স্বাধীনতার আগে থেকে এটিই চট্টগ্রামের সবচেয়ে ভিআইপি বৃহত্তম বাজার।
মুসলিম সম্প্রদায়ের পবিত্র ঈদুল ফিতর ঘিরে জমজমাট বাণিজ্য হয় এই মার্কেটে। বিশেষ ভালো ব্রান্ডে নামিদামি কাপড় জোতা জুয়ালারীর জন্য এ বিকল্প ছিলো এক সময় চট্টগ্রাম শহরে।
রোজার অন্তত এক মাস আগে জেলা ও আশপাশের উপজেলার উচ্চবিত্ত ক্রেতাদের ভিড় জমে এখানে। করোনা পরিস্থিতি ছাড়া অন্যান্য বছরের চিত্র একই রকম হলেও এবার চিত্র ভিন্ন বলছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের আনাগোনা কম হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ ব্যবসায়ীদের কপালে।
তাদের আশঙ্কা, অন্যান্য বছরের সেই জৌলুস হয়তো তারা হারাতে বসেছেন। কারণ হিসেবে বলছেন, দ্রব্যমূল্যসহ জীবনযাত্রায় ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে খেয়ে বেঁচে থাকাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। তাই বিলাসী পণ্য বা প্রয়োজন ছাড়া কেনাকাটা করছেন না।
জানা গেছে, দেশি-বিদেশি কাপড়ের জুতা কসমেটিক জুয়েলারি ব্যাগ ইলেকট্রিক সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত শত বছরের পুরনো বিপনীবিতান বা নিউমার্কেট । এখানে ছোট-বড় প্রায় সবকিছু সব বয়সের পণ্য পাওয়া যায়।
চারতলা বিশিষ্ট এই মার্কেটে পাচঁশতাধিক দোকান রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের দেশি কাপড়সহ সবকিছু পাওয়া যায়; তাই ক্রেতারা যুগ যুগ ধরে ছুটে আসেন এখানে। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, শার্টপিস, প্যান্ট জুতা কসমেটিক জুয়েলারি কিনতে আসেন দেশের নানা প্রান্তের খুচরা বিক্রেতারা। এবার ঈদে বিক্রির জন্য ভারত, পাকিস্তান, চীন, থাইল্যান্ড থেকেও ব্যবসায়ীরা কাপড় এনেছেন।
আজ রবিবার রাতে নিউমার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে ভিন্ন চিত্র। প্রতিবছর মতো ক্রেতার কোন ভীড় নেই বললেই চলে। ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, প্রতিবছর এক মাস আগে থেকে নিউমার্কেটে ক্রেতার ভিড়ে মুখর হয়ে ওঠে চারতলা বিশিষ্ট এই বিপনীবিতান । গত বছরের তুলনায় এবার বেচাবিক্রি অনেকটা কম।
মার্কেটের একটি রেডিমেড কাপড়ের দোকান মালিক সময় খবরকে বলেন, নিত্যপণ্যের সঙ্গে বেড়েছে কাপড়ের দামও। সব মিলিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। মানুষের পকেটে টাকাও নেই ঈদের আনন্দও নেই তাই।আজকে বিশ রমজান গেলে বাজারে বেচাকেনা নেই। অন্যান্য বছর পনের রমজানের পর নিউমার্কেট ঢুকেই বড় কঠিন ছিলো সেই হিসাবে এবছর মার্কেট ফাঁকা বললেই চলে। তার কারন হচ্ছে, দেশের অর্থনীতি মন্দাভাব।
অন্য একজন জুতা ব্যবসায়ী জানান, বর্তমান দেশে টাকা নিদিষ্ট একশ্রেণীর মানুষের কাছে চলেগেছে সাধারণ মানুষের নিরব দুর্ভিক্ষ চলছে। যার প্রমান আজকে ২০ রমজান আমাদের মার্কেট জনশূন্য।
পটিয়া উপজেলা থেকে আসা ক্রেতা মাসুম বলেন, অন্য বছরের তুলনায় খুচরা বাজারে কাপড়ের বেচাকেনা একেবারে কম। আমিও পরিবারের সবার জন্য এখনো কাপড় কিনতে পারিনি। কোথাও থেকে টাকা জোগাড় করতে পারলেই আবারও নতুন করে কাপড়।
আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে জানা যায়, তাঁরা এখনো এবছর নতুন জামাকাপড় কিনবেন কিনা এখনো সিদ্ধান্ত নিয়ে পারেনি। সবকিছু আল্লাহ জানেন এবছর ঈদ কেমন হবে।
মার্কেটে ঘুরতে এসেছি, এমন জবাবেই দেন এরা। এর কারন হিসাবে জানান, এবছর দ্রব্যমূল্য সহ সবকিছুর মূল্যবৃদ্ধির কারনে মাস শেষে অবশিষ্ট টাকা হাতে থাকে না। মাস শেষে ধার করতে হয়। তাহলে ঈদের এই বাড়তি খরচ কিভাবে সামলাবো?