আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের আপত্তি সত্ত্বেও জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সোমবার ভারতীয় কাশ্মীরের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী শ্রীনগরে শুরু হয়েছে পর্যটন সম্মেলন। এ উপলক্ষে পুরো কাশ্মিরজুড়েই নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার শুরু হওয়া ৩ দিনব্যাপী ওই পর্যটন সম্মেলন শেষ হবে আগামী বুধবার।
২০১৯ সালে ভারতীয় সরকার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পর রাজ্যটিতে এবারই প্রথম কোনো বড় ধরনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলোর ৬০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।
এদিকে সদস্য দেশ হয়েও এই সম্মেলনে অংশ নেয়নি চীন। কাশ্মীরের মতো বিতর্কিত অঞ্চলে সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করায় দেশটি সম্মেলনে অংশ নিতে আপত্তি জানায়।
সদস্য দেশ না হলেও কাশ্মীরে সম্মেলনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানও। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই সমগ্র কাশ্মীরকে নিজেদের দাবি করলেও রাজ্যটির দুটি ভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে এ দুই দেশ। এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশ দুটি ইতিপূর্বে দুইবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এ ছাড়া এ অঞ্চল নিয়ে দু’দেশের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় কাশ্মীরে পর্যটন সম্মেলনের স্থান নির্ধারণ করার ভারতীয় সিদ্ধান্তকে গত এপ্রিলেই সমালোচনা করে পাকিস্তান। বিষয়টিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও মন্তব্য করে দেশটি।
তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করে-জম্মু, কাশ্মীর এবং লাদাখে সম্মেলন করা একটি ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়া। কারণ তিনটি অঞ্চলই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কাশ্মীরে জি-২০ এর পর্যটন সম্মেলন অনুষ্ঠানকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে আখ্যায়িত করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এই সম্মেলনের মাধ্যমে অঞ্চলটির সংস্কৃতি বহির্বিশ্বে উন্মুক্ত হবে বলে মনে করে তারা।
এ অবস্থায় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরজুড়ে বেশ কয়েক ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভারত সরকার। কারণ ১৯৮৯ সাল থেকেই এই অঞ্চলটিতে অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভারতের অভিযোগ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে পাকিস্তান। যদিও এ ধরনের অভিযোগ ইসলামাবাদ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে।
অন্যদিকে গত কয়েক দশক ধরেই বিরোধী রাজনীতিবিদ সহ অধিকার কর্মী এবং স্থানীয়রা অভিযোগ করে আসছেন-অঞ্চলটিতে ভারতীয় বিভিন্ন বাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে দিল্লি।
চলতি বছর অঞ্চলটিতে ভারতীয় বাহিনীর ওপর সন্দেহভাজন জঙ্গিদের হামলার ঘটনা বেড়েছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বলছেন, জি-২০ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় তারা একাধিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এলিট ফোর্স ছাড়াও মেরিন কমান্ডো, ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স এবং নিয়মিত পুলিশ বাহিনী সেখানে অবস্থান করছে।
নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি জোরদার করা হয়েছে কাশ্মীরের জনপ্রিয় ডাল-লেক এবং শের-ই-কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে, যেখানে সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ ছাড়া যে রুট দিয়ে সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধিরা যাতায়াত করবেন সেই পথে থাকা সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অসংখ্য সামরিক বাংকার স্থাপন করা হলেও সম্মেলনের বিভিন্ন ব্যানার দিয়ে সেগুলোকে আড়াল করে রাখা হয়েছে।