৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৪:০৬| শরৎকাল|

টাঙ্গুয়ার হাওরে প্লাসিকের চাঁইয়ের সয়লাব,পরিবেশ ও জীববৈত্র‍্যের সর্বনাশ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, মে ১৩, ২০২৩,
  • 225 Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক :নানান কারনেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর রামসার সাইট,প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষিত টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈত্র‍্যে ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।তারিমধ্যে খব সহজে বেশি পরিমাণে চিংড়ি মাছসহ ছোটমাছ ধরার জন্য টাঙ্গুয়ার হাওরে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে প্লাসিকের তৈরি চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দোয়ারী জাল।এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।

গেল ৬-৭ বছর পূর্বে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈত্র‍্যে রক্ষণাবেক্ষণে একজন এক্সিকিউটিব ম্যাজিস্ট্রেট এর সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকায় এর ব্যবহার খানিকটা কম থাকলেও বর্তমানে টাঙ্গুয়ার প্লাসিকের চাঁই ও চায়না দুয়ারি জালের অবাধ ব্যবহারের কারনে চরম হুমকির মুখে রয়েছে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈত্র‍্যে।

জানাযায় গেল( ৩০এপ্রিল)প্লাসিকের তৈরি চাঁই নিয়ে যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুপ্রভাত চাকমা ১হাজার পিস প্লাসিকের তৈরি মাছ ধরার চাঁই জব্দ করে আগুনে পুড়ে ভুস্মিভূত করেন।এতেও থামেনি ওই পরিবেশ দূষণকারী প্লাসিকের চাঁইয়ের আমদানি।প্রতিদিনেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে এসব চাঁই টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওর গুলোতে প্রবেশ করছে। বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের সবকটি হাওর প্লাসিকের চাঁইয়ের সয়লাব।

স্থানীয় সচেতন মহল জানান উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওর গুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হতো তাহলে হাওরের পরিবেশটা রক্ষা পেত।তারা জানান বর্তমানে হাওরগুলো যেন অরক্ষিত রয়েছে।

সম্প্রতি টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানাযায়,খুব সহজে বেশি পরিমাণ চিংড়িমাছসহ ছোট মাছ শিকার করার জন্য হাওরের প্রতিটি বিলেই ছড়িয়ে ছিঠিয়ে আছে প্লাসিকের তৈরি চাঁই ও চায়না দুয়ারি জাল। এগুলো সন্ধ্যার পূর্বে হাওর, বিল,নদী-নালায় পানির নিচে সারিবদ্ধভাবে সুতো দিয়ে বেধে ময়দার টোপ দিয়ে রেখে দেয়।সকালে এসে চাঁই তুলে এর ভিতর থেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ বের করে সেগুলো এমনি ফেলে রেখে দেওয়া হয়।চায়না দুয়ারি জাল গুলো তুলে নিয়ে আসলেও, প্লাসিকের চাঁই গুলো নষ্ট হয়ে গেলে এভাবেই পানির নিচে থেকে যায়।যার ফলে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈত্র‍্যের সর্বনাশ।

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের পাটাবুকা গ্রামের বাসিন্দা জুনাইদ মিয়া জানান টাঙ্গুয়ার হাওরে বেশি করে চিংড়ি মাছসহ নানাপ্রজাতির ছোটমাছ ধরার জন্য জেলেরা প্লাসিকের তৈরি চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করছে।এই চাঁই ব্যবহারের পর নষ্ট হলে হাওরেই ফেলে দিচ্ছে। যাহা জলচর প্রাণীসহ মাছের জন্যও ক্ষতিকর।পরিবেশের জন্য ভয়ানক এই চাঁইয়ের ব্যবহার প্রতিরোধ করা না গেলে টাঙ্গুয়ার হাওরসহ উপজেলার সবকটি হাওরের পরিবেশ ও জীববৈত্র‍্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।

হাওর পাড়ের রূপনগর গ্রামের জেলে আফিল উদ্দিনসহ একাধিক জেলে জানান,একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরসহ আশপাশের হাওরগুলোতে চিংড়ি মাছসহ ছোটমাছ ধরার জন্য হাওর পাড়ের জেলেরা বাঁশবেতের তৈরি চাঁই ব্যবহার করতো।গেল ১০-১২ বছর ধরে সহজে বেশি মাছ ধরার জন্য প্লাসিকের চাঁই ও চায়না হতে আমদানিকৃত চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহার করা শুরু করায়,এখন স্থানীয়দের জেলেদের কাছে অনেকটাই প্রিয় হয়ে উঠেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর ইকো ট্যুরিস্ট গাইড ও টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সম্মানিত সদস্য অকিল তালুকদার বলেন,প্লাস্টিক হচ্ছে পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলেও সরকার ঘোষিত প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা টাঙ্গুয়ার হাওরে সচরাচর দেখা যায় এই পরিবেশ দুষণকারী প্লাসিকের চাঁইয়ের ব্যবহার এ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘাঁ।

সিলেটে অবস্থানরত হাওর পাড়ের পরিবেশবাদী সমীরণ তালুকদার বলেন প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক ব্যবহারের পর যদি হাওরে যত্রতত্র ফেলে রাখে তাহলে হাওরের পরিবেশ ও জীববৈত্র‍্যে চরম হুমকির মুখে পড়বে।তিনি আর বলেন প্লাস্টিক অপচনশীল আর এসব প্লাসিকের মাছ ধরার চাঁই পানির নিচে ও জলাশয়ে ফেলে রাখলে মাছসহ জলচর বিভিন্ন প্রাণীর জন্য চরম ক্ষতিকর। এগুলো ব্যবহার রোধে স্থানীয় হাওরবাসীকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরী।

হাওর কেন্দ্রীক নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ হাসান খান জানান বিষয়টি আমার জানা নেই,তবে প্লাসিকের দূষণ নিয়ে পর্যটকবাহী নৌযানে আমরা সচেতনতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণকরি।এ ব্যাপারে খুঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ