দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে স্মার্ট বিদ্যালয়ে রূপান্তরের কাজ করা হচ্ছে। ফলে গতানুগতিক শিক্ষাদান পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান কার্যক্রম বদলে যাচ্ছে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আধুনিক ভবন নির্মাণ, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব, স্মার্ট বোর্ড, ডিজিটাল ল্যাব ইত্যাদি স্থাপন করার যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ ধরনের উদ্যোগ দেশের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেওয়া গেলে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরেই শিশুদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞানচর্চায় মজবুত ভিত্তি তৈরি হবে; যা স্মার্ট নাগরিক বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিত্যনতুন সংযোজনকে সাদরে গ্রহণ এবং ব্যবহার করেই উন্নত রাষ্ট্রগুলো পৌঁছে গেছে সফলতার স্বর্ণচূড়ায়। কিন্তু সেই দৌড়ে আমরা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে।
এখনই সময় মৌলিক পদ্ধতিতে পাঠদানের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে যোগ্য করে তোলা। এই পাঠ প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই শুরু হোক। কারণ প্রাথমিক শিক্ষাই হলো জাতি বিনির্মাণের মূল ভিত্তি।
ইতিমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব উপলব্ধি করে প্রাথমিক শিক্ষায় এর সফল সংযোজন ঘটানো হয়েছে। আমাদের শিক্ষার নানা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের শিক্ষাকে টেকসই ও মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছে।
ই-বুক প্রণয়ন, শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠ উপস্থাপন আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যুগোপযোগী ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করছে।
শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণে বিশ্বায়নের যুগে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষার শিখন-শেখানো পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির সংযোগ ঘটানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে কাজে লাগানোর মাধ্যমে কঠিন শ্রেণি কার্যক্রমকে আনন্দময় করে তোলা হচ্ছে।
দেশে শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ আগেই শুরু হয়েছে। তবে করোনাকালে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি ব্যবহারে আরো উদ্যোগী করেছে, যার মাধ্যমে ডিজিটাল শিক্ষার গুরুত্ব সামনে এসেছে।
প্রাথমিক শিক্ষায় চলমান ডিজিটাল সেবা সমূহ: মোবাইলের মাধ্যমে শতভাগ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহার করে পাঠদান, অনলাইনে শিক্ষক বদলি, অনলাইনে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি, ইএফটি এর মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদান, আইপিইএমিস মাধ্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয়ের তথ্য প্রদান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে ওয়াইফাই (ইন্টারনেট) সংযোগ, ই-মনিটরিং, পিইপিএমআইএস’র মাধ্যমে বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামোর তথ্য প্রদান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জুম ও গুগলমিট অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে পাঠদান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘরে বসে শিখি পাঠদান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বেতার ও কমিউনিটি রেডিও এর মাধ্যমে ঘরে বসে শিখি, ডিজিটাল টেক্সটবুক ব্যবহার করে পাঠদান, ই-নথির মাধ্যমে শিক্ষকদের
বিভিন্ন আবেদন অনলাইনে নিস্পত্তি করা, ই-জিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট), শিক্ষক বাতায়ন ও মুক্তপাঠ, ইনোভেশন, হোয়াটসঅ্যাপ মনিটরিং, জাতীয় তথ্য বাতায়নের সঙ্গে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করণ, অনলাইনে জন্মনিবন্ধন যাচাই, জিপিএফ স্লিপ উত্তোলন, পে ফিক্সেশনের মাধ্যমে ইনক্রিমেন্টের কপি সংগ্রহ, এনসিটিবি’র ওয়েবসাইট থেকে পাঠ্য বই, শিক্ষক সহায়িকা, শিক্ষক সংস্করণ ও শিক্ষক নির্দেশিকা ডাউনলোড দিয়ে ব্যবহার, শিক্ষার্থীদের কোভিড-১৯ ভেকসিনের রেজিষ্ট্রেশন ও সনদ প্রদান।
লেখক- মো. আমিরুল ইসলাম
সহকারী শিক্ষক, ত্রিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।