সাইফুল আলম তুহিন
ত্রিশাল(ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের ত্রিশালে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের পরিবারের ব্যবসায়িক পার্টনার পরিচয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ফিসারি করে পানি নিষ্কাশনের পথে বাধা সৃষ্টি করার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে।
মঙ্গলবার(১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের বাদামিয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করে।
এসময় তারা বলেন, আট বছর আগেও এখানকার কৃষকরা তাদের জমিতে নিয়মিত ফসল করতে পারতো। কিন্ত পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে স্থানীয় প্রভাবশালী সাজ্জাদ হোসেন (লালন) তার মৎস খামারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের পরিবারের অংশীদারত্ব রয়েছে জানিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়। এতে শতাধিক কৃষকের প্রায় দু’শ একর আবাদি জমি দীর্ঘদিন ধরে অনাবাদি পড়ে রয়েছে। এতোদিন লালন ও তার বাহিনীর ভয়ে লোকজন প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
এছাড়া তারা অভিযোগ করেন, ফিসারিতে জমি দেওয়া অনেক জমির মালিককে তাদের প্রাপ্য টাকা না দিয়ে জোর করে ভোগদখল করে খাচ্ছেন লালন। জমির ভাড়ার টাকা চাইতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে তার সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি প্রদর্শন করা সহ হামলা-মামলায় ফেলে কোনঠাসা করে রেখেছেন। ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি তাদের বকেয়া পাওনা(ভাড়া) পরিশোধ করা সহ পানি নিষ্কাশনের পথ খোলে দিয়ে কতৃপক্ষ যেনো কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়।
জানা যায়, বাদামিয়া আইত্তাকুড়ি ও হিংরাকুড়ি বিলের পানি খিরু নদ দিয়ে নেমে যেতো। ২০১৭ সালে বাদামিয়া এলাকায় অন্তত ১০০ একর জমিতে মাছের খামার করেন সাজ্জাদ হোসেন (লালন) নামের এক ব্যাক্তি। তিনি একই ইউনিয়নের খারহর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নিজেকে সদ্য সাবেক মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের ছেলের বন্ধু পরিচয় দিতেন। এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে অন্তত ৭০ একর জমি ও নিজের কেনা জমি মিলে মাছের খামারটি করেন তিনি। মাছের খামার করার কারণে বিল এলাকার পানি নিষ্কাশিত হতে না পারায় ২০০ একর জমি অনাবাদী অবস্থায় রয়েছে।
প্রতিকার চেয়ে ২০১৭ সাল থেকে প্রশাসনের কাছে ঘুরছেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু মন্ত্রীর ছেলের বন্ধু হওয়ার কারণে প্রতিকার মিলছে না।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল ও ২০১৯ সালে পানি নিষ্কাশনে পদক্ষেপ নিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করে ভুক্তভোগীরা। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ৩০ আগস্ট পূণরায় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
সাবেক মন্ত্রীর ছেলের প্রভাব দেখানো সহ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সাজ্জাদ হোসেন (লালন) বলেন, পানি নিষ্কাশনের জন্য খাল খননের চেষ্টা করা হলেও স্থানীয়রা অল্প একটু জমি না ছাড়ায় একদিকের কাজ শেষ হয়নি। ওই জায়গাটুকু পেলেই পানি নিষ্কাশনে বাধা থাকবে না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান বলেন, ‘আমি মৌখিক ভাবে বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি জলাবদ্ধতার কারণে ওইখানের প্রায় দু’শ একর জমি অনাবাদি রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে সরেজমিন পরিদর্শন পূর্বক প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’
ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, ‘জলাবদ্ধতা সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’