ময়মনসিংহের ত্রিশালে টানা চতুর্থবারের মতো পৌষালী পাঠোৎসব পার্বণ-৪ শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানটির আয়োজক স্বপ্নবিলাস ইয়োথ সোসাইটি।
দুই দিনব্যাপী আয়োজনের বৃহস্পতিবার ছিল প্রথম দিন। অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে প্রথম দিনেই ছিল হাজারো দর্শনার্থীর ভীড়।
ওইদিন বিকেলে উপজেলার মঠবাড়ী ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আর্ট ফেস্টের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করা হয় মেলায় আগত বিভিন্ন স্টলগুলো। বিকাল থেকে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
স্বপ্ন বিলাস ইয়োথ সোসাইটি ও স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের অভিনয়ে রাতে মঞ্চস্থ হয় ‘পার্ফোমেন্স আর্ট’- মানুষ।
পরে গুণীজনদের উপস্থিতিতে হয় আলোচনা, আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক মশিহ উদ্দিন সাকের, সংগঠক ও পাঠাগার আন্দোলন কর্মী আবদুস সাত্তার খান প্রমূখ।
উপজেলার একদল স্থানীয় স্বপ্নবাজ তরুণ, যারা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠলেও তাদের স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া।
গড়েছেন স্বপ্নবিলাস ইয়োথ সোসাইটি। যার মাধ্যমে পরিচালিত হয় স্বপ্নবিলাস উন্মুক্ত পাঠাগার, বই পড়া কার্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষা ও পরিবেশ নিয়ে সারা বছরব্যাপী তারা কাজ করে স্কুল কলেজগুলোতে। এছাড়া নানামুখী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনহিতকর কর্মসূচি।
বিগত কয়েকবছর ধরে তারা আয়োজন করে আসছে পৌষালী পাঠোৎসব। বৃহস্পতিবার বিকেলে শুরু হওয়া উৎসবের শুক্রবার ছিল শেষ দিন।
দুই দিনব্যাপী আয়োজনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বৃক্ষবন্ধু হিসেবে পরিচিত মুখ মোঃ আযহারুল ইসলাম খান, পরিবেশ কর্মী রাতুল মুন্সী। এছাড়া পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ফলদ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক দ্রাবিড় সৈকত (অধ্যাপক, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়)।
উৎসবে ছিল ভিন্ন কিছু আয়োজন বই বিনিময় উৎসব, আর্ট ফেস্ট, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের চিত্র প্রদর্শনী, বই মেলা, পিঠা উৎসব, বিভিন্ন মৃৎ ও হস্ত শিল্পের প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, কবিতা আবৃত্তি, লোকগীতি ও কনসার্ট।
উৎসবকে ঘিরে স্কুলের মাঠে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রামীণ পরিবেশ, গ্রামীণ ঐতিহ্য। লোক সংস্কৃতির যে দৃশ্যগুলো চোখে পড়ার মতো।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে পার্শ্ববর্তী স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নবীন-প্রবীণ ও বিভিন্ন সুধীজনের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল উৎসব প্রাঙ্গণ। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যর সাথে শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।
উৎসবের শেষ দিন রাতে কবিতা আবৃত্তি, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, লোকগীতি ও কনসার্টের মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
ব্যতিক্রমী ওই আয়োজনে এলাকার মানুষের মাঝে ভিন্ন আমেজের ভালো লাগা সৃষ্টি হয়েছে, উৎসবটি মন কেড়েছে হাজারো উৎসুক জনতার।
পৌষালী পাঠোৎসবে আগত দর্শনার্থী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, “পাথরের বুকে যে ফুল ফোটার বিষয়। জাতির ক্রান্তি লগ্নে এরকম আয়োজন আর কাজ আশার বাণী জাগায়। এক্ষেত্রে স্বপ্নবিলাস ইয়োথ সোসাইটিকে অবশ্যই ধন্যবাদ জানাবো।”
স্বপ্নবিলাস ইয়োথ সোসাইটির সহপ্রতিষ্ঠাতা খালেদ হাসান শান্ত বলেন, আমরা একটা ‘আমূল পরিবর্তন’ চাই। সেক্ষেত্রে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সবচেয়ে জরুরী। সেজন্য আমরা বেছে নিয়েছি বই। আমরা বিশ্বাস করি, নিয়মিত একজন পাঠক হয় নৈতিকতা সম্পন্ন, রুচিশীল, বস্তুনিষ্ঠ। আমরা মনে করি, বই পড়ার মাধ্যমে একজন মননশীল শিক্ষার্থী সচেতন থাকে অন্তত তার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে।
আধুনিক কালের নেতিবাচক বিষয়গুলো থেকে দূরে থাকতে পারে। আমাদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সেটিই, যেন এলাকার স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজেদের নিয়ে সচেতন থাকতে পারে, দেশ সংস্কৃতি নিয়ে সচেতন থাকতে পারে। দিন শেষে সে যেন আমাদের সমাজেরই উপকারে এগিয়ে আসে।