ময়মনসিংহের নান্দাইলে গত তিন মাসে ভিন্ন ঘটনায় সাতটি হত্যা কান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও ভিন্ন সময়ে ১০টি ইজিবাইক চুরি হলেও পুলিশ একটিরও কোনো সন্ধান করতে পারেনি। ফলে ইজিবাইক চালকরা তাঁদের এক মাত্র উপার্জন পথ হারিয়ে দিশেহারা। চুরির ঘটনায় চালকরা বেকার হয়ে পড়েছেন।
বর্তমানে তাঁদের পরিবারগুলোও চরম বেকায়দায় পড়েছেন। অপরদিকে সাতটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো মূল হোতারা ধরা না পড়ায় নিহতের পরিবারে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার গুলো ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নান্দাইল পৌরসভার বাসিন্দা আব্দুল মন্নানের স্ত্রী নাজমা আক্তার (৩৮) কে গত ১৭ এপ্রিল রাতে দুবৃর্ত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। পরের দিন সকালে নান্দাইল-
দেয়ানগঞ্জ বাইপাস রোডের পাশে ধান খেত থেকে পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে।
এদিকে ২১ এপ্রিল রাত ৯ টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে রানা মিয়া (২৫) নামের এক যুবক কে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ।
সে রাজগাতি ইউনিয়নের বনাটি গ্রামের আব্দুল হাসেমের পুত্র। হত্যার ঘটনায় নিহতের চাচাতো ভাই মোহাম্মদ মাসুদ মিয়া বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এঘটনায় ৪ আসামী গ্রেফতার করা হয়। আট আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। মামলার মূলহোতা সহ অন্যরা পলাতক রয়ছে।
একই মাসের ২৬ এপ্রিল ইজিবাইক সহ উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের গোঁসাই চান্দুরা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে আঞ্জুরুল হক (৪০) নিখোঁজ হয়। পরে ২৮ এপ্রিল মুশুল্লি এলাকার এক ডোবা থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ইজিবাইক উদ্ধার হয়নি।
এদিকে নান্দাইল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে লিফলেট বিতরণ কালে অপর প্রার্থীর সমর্থকরা মুরাদ হাসান ভূঁইয়া (১৭) নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। সে পৌরসভার কাকচর মহল্লার তফাজ্জল হোসেন ভূঁইয়া ছেলে। এ ঘটনায় তফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে ১৫ জনের নামে মামলা করলেও পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে।
এক মাসে আর কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত ১৯ জুন খেতের আইল নিয়ে দ্বন্দ্বে খুন হন উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন চেচু মিয়ার ছেলে মো. লাল মিয়া (২৮)।
এ দিকে গত ২১ জুন বাড়ির সীমানা বিরোধের জেরে
উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়নের কোনাডাঙ্গর গ্রামে প্রতিপক্ষের সুজন মিয়া ও বাবলু মিয়ার পরিবারের লোকজনের মারধর ও হামলায় গুরুতর আহত ইদ্রিস আলী (৭০) হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান।
গত ২২ জুন উপজেলার চর বেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর গ্রামের মৃত আব্দুলের পুত্র ইজিবাইক চালক মো. আবুল কাশেম (৪২) প্রতিপক্ষের মারধরের শিকার হয়ে আহত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান।
জানা যায়, পাওনা টাকা চাইতে গেলে রফিকুল ইসলাম ও তাঁর লোকজন কাশেমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে মারা যায়। প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ মূল হোতাদের গ্রেফতার করতে পারেনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদের দাবি সাতটি খুনের মধ্যে ইদ্রিস আলী নিহতের ঘটনাটি হত্যা নয়। তাৎক্ষনিক শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তারপরও ময়নাতদন্ত করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে অন্যসব ঘটনার মামলায় মূল অভিযুক্ত ছাড়াও অনেক আসামি দেওয়া হয়েছে। এরপরও বেশ কয়েকজন আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে গত প্রায় এক মাসে ৫টি ছাড়াও মোট ১০টি ইজিবাইক চুরি হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে।
উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের মো. গোলাপ মিয়ার তিনটি ইজিবাইক চুরি হয় গত বছরের নভেম্বর মাসে।
মামলা হলেও দীর্ঘ দিনেও পুলিশ কোনো সন্ধান করতে পারেনি। ২৬ এপ্রিল গোসাই চান্দুরার আঞ্জুরুল হকের একটি। ২৬ মে মিশ্রিপুর গ্রামের আবুলের ও মো. আব্দুল্লাহ’র একটি। গত ১২ জুন মাসুদ রানা ও মোজাম্মেল হক শিমুলের একটি।
গত ২২ জুন চন্ডীপাশা মহল্লার মো. আব্দুল আওয়ালের অটোরিকসাটি পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে থেকে চুরি হয়ে যায়। এ ছাড়াও গত ১২ জুন রাতে দশালিয়ার জনৈক ফেরদৌসের দুইটি অটোরিকসার ব্যাটারি নিয়ে যায় চোরেরা। এসব চুরির ঘটনায় অটো রিকসা ও ইজিবাইক চালকরা আতঙ্কিত।
ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গৌরিপুর সার্কেল) মো. সুমন মিয়া বলেন, বিভিন্ন কর্মকান্ডের হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই স্বাভাবিক রয়েছে। এইসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক আসামীকে গ্রেফতার করেছে। বাকীদের গ্রেফতারে জোর প্রচেষ্টা রয়েছে।