ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগ-দখল করা সরকারি জমি উদ্ধারে মাঠে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন। গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং এপ্রিল মাসে উপজেলা প্রশাসন প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি জমি উদ্ধার করেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুন কৃষ্ণ পালের নেতৃত্বে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
জানা যায়, নান্দাইল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বছরের পর বছর ধরে সরকারি জমি অবৈধভাবে ভোগদখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। বিএস রেকর্ড অনুসারে এই জমিগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগের নামে থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাস্তার পাশে এইসব জায়গা দোকান-পাট নির্মাণসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতো।
সম্প্রতি এসব দখলকৃত জমি উদ্ধারে অভিযান শুরু করেন অরুন কৃষ্ণ পাল। অভিযানে সার্বিক সহায়তা করেন নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. আব্দুল মজিদ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুস সালামের পক্ষ থেকেও সবধরণের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে গত কয়েক মাসে উপজেলা প্রশাসন উপজেলা সদরে মেইন রাস্তার পাশে ৭৮ শতক (মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা), চন্ডিপাশা ইউনিয়নে নান্দাইল চৌরাস্তায় ১.৬০ একর (মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা), এবং মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের কানুরামপুর মোড়ে ১ একরসহ (মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা) সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের জমি উদ্ধার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
এসব জমি দখল করে অবৈধ দোকান-পাট নির্মাণ করে ব্যবহার করত প্রভাবশালীরা। ফলে মেইন রাস্তায় সবসময় যানজট লেগে থাকতো।
এদিকে সরকারি জমি উদ্ধারের কারণে উপজেলাবাসীর বহুদিনের প্রত্যাশার যানজটমুক্ত নান্দাইল গড়ার স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হচ্ছে। দখলদারদের থেকে কোটি টাকার জমি উদ্ধার করে জনসাধারণের প্রশংসায় ভাসছে উপজেলা প্রশাসন।
একইসঙ্গে স্থানীয়দের দাবি, শিগগিরই যেন দখলে থাকা অন্যান্য সকল জমিগুলোও উদ্ধার করে সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনায় নিয়ে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
নান্দাইল নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা জনাব মো. খলিলুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন পর নান্দাইলবাসী একজন মন্ত্রী পেয়েছে। তার কাছে আমাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া। নান্দাইল বাজার বা আশেপাশে শিশুদের জন্য কোন পার্ক নেই। অবসর সময়ে একটু গিয়ে বসার ও সময় কাটানোর মতো জায়গা নেই।
ইউএনও যেভাবে দখলে থাকা সরকারি জমি উদ্ধার করছে এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। একইসাথে এই জমিগুলো যেন পুনরায় আবার দখল না হয়, সেজন্য পার্ক-খেলার মাঠ বা স্থায়ী কোন পদক্ষেপ যেন নেওয়া হয় সেই দাবি জানাই।
রফিকুল ইসলাম নামক পুরাতন বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, নান্দাইল নদীর পাড় ঘেঁষে অনেক সরকারি জমি অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে। আমরা বৈধ জায়গায় যারা ব্যবসা করছি, অবৈধ ব্যবসায়ীদের জন্য আমরাও সুবিধা করতে পারি না।
এজন্য ইউএনওর কাছে দাবি, যেন নান্দাইল পুরাতন বাজারের সকল অবৈধভাবে দখলকৃত জমি উদ্ধার করা হয়। প্রয়োজনে ওনাকে সব ধরণের সহযোগিতা আমরা করবো।
জমি উদ্ধার প্রসঙ্গে ইউএনও অরুন কৃষ্ণ পাল জানান, প্রভাবশালীদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া জমিগুলো সরকারের বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে শহীদমিনার ঘেষা মেইন রাস্তার পাশে প্রায় ৪০ শতাংশ জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে নান্দাইলবাসীর বহুল প্রত্যাশিত নান্দাইল বাসস্ট্যান্ডের জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে। নান্দাইল চৌরাস্তায় ০৪টি যাত্রী ছাউনির জায়গা প্রস্তুত করা হয়েছে।
মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পরিচ্ছন্ন এবং সুশৃঙ্খল নান্দাইল উপহার দেবার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে দখলে থাকা জমি চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেগুলোও উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে অবৈধভাবে দখলে থাকা সরকারের সব জমি উদ্ধার করা হবে।
স্থানীয়দের দাবি, অবৈধভাবে প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সকল জমি উদ্ধার করে সরকার সেগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করুক। এর ফলে জনসাধারণ উপকৃত হবে।