মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):
একটি নামজারি খারিজের সরকারি ফি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকা। কিন্তু ওই খারিজ সম্পন্ন করতে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে (নায়েব) ঘুষ দিতে হয় ৮ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকারও বেশি।
তবে ঘুষের টাকা নায়েব নিজের হাতে না নিয়ে তার অফিস সহায়ক এবং তাঁর প্রতিবেশী এক ভাতিজার মাধ্যমে লেনদেন করেন। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. সানোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও খারিজের জন্য অফিস সহকারী আহাম্মদের ঘুষ নেওয়ার একটি ভিডিও আজকের পত্রিকার হাতে আসে।
এদিকে নায়েবের এমন কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় ১২৬ জন ভুক্তভোগী স্বাক্ষর করে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
তাঁদের দেওয়া লিখিত অভিযোগ সূত্র এবং ভুক্তভোগী অনেকের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাজিবপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সানোয়ার হোসেন কর্মরত আছেন প্রায় ছয় বছর ধরে। ভূমি অফিসের পাশেই তাঁর বাড়ি হওয়ায় অফিস চলাকালীন সময়েও তিনি তাঁর বাড়িতে অবস্থান করেন। ওই অবস্থায় বেশিরভাগ সময়েই ভূমি সেবা গ্রহীতারা অফিস কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর দেখা পায়না।
যে কারণে ফোনে অথবা সরাসরি নায়েবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর অফিস সহায়ক আহাম্মদ এবং প্রতিবেশী ভাতিজা হিরকের সঙ্গে দেখা করতে বলেন। হিরক ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের কোন কর্মচারী নন। তবে সে দিনভর অফিসেই পড়ে থাকেন এবং নায়েবের ঘুষের লেনদেন করেন। হিরক এবং অফিস সহায়ক আহাম্মদ মিলে প্রতি খারিজ প্রতি ৮ হাজার থেকে শুরু করে ৪০ হাজারেরও ঊর্ধ্বে টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে আদায় করেন।
এ অবস্থায় রাজিবপুর ইউনিয়নের মাইজহাটি গ্রামের বাসিন্দা মো. উজ্জ্বল এবং মো. মাহফুজ নামে দুই ভুক্তভোগী জানান, সম্প্রতি তাঁরা ২০ শতক জমির খারিজ করতে নায়েবের কাছে যান। পরে নায়েব তাঁদেরকে অফিস সহায়ক আহাম্মদের সাথে দেখা করতে বলে। এরপর খারিজ বাবদ আহাম্মদ তাঁদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাবি করলে ১৮ হাজার টাকায় নির্ধারিত হয়। এরপর তাঁরা আহাম্মদকে প্রথমে ১৫ হাজার পরে আরও তিন হাজার টাকা দেন।
এদিকে খারিজ বাবদ ঘুষ নিতে অফিস সহায়ক আহাম্মদের একটি ভাইরাল হয়। যা পরে সময় খবরের হাতে আসে।
ওই ভিডিওতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে আহাম্মদ ১৫ হাজার টাকা নিতে দেখা যায়।
টাকা নেওয়ার একপর্যায়ে অফিস সহায়ক আহাম্মদকে বলতে শোনা যায়, ‘টাকা হইছে হাতের ময়লা, আপনি তো মাত্র ১৫ হাজার দিছেন, আরো তিন হাজার দিবাইন; মস্তু নামের এক লোকের খারিজ করে দিছি সে ৪০ হাজার টাকা দিছে।’
টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে অফিস সহায়ক আহাম্মদ সময় খবরকে বলেন, ‘আমি ওই টাকা ধার হিসেবে নিয়েছি। পরে ফেরত দিয়ে দিব। খারিজের জন্য আমি কোন টাকা-পয়সা নেইনি’।
নায়েবের ভাতিজা হিরক বলেন, ‘নায়েব আমার প্রতিবেশী চাচা হন। আমি ওই সুবাধে অফিসের কাজ কাম করে দিই। কিন্তু কোন টাকা-পয়সার লেনদেন আমি করি না। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’
রাজিবপুর ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার অফিস সহায়ক এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে, ভিডিওটা দেখে আমি তাঁর কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, এক লোক খাজনার চেক কাটতে বিকাশে টাকা দিতে পারছিলেন না। তাই সে অফিসে এসে হাতে দিয়ে গেছে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে যে ধরণের অভিযোগ ওঠেছে সবগুলোই মিথ্যা এবং বানোয়াট।’
এ প্রসঙ্গে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘টাকা নেওয়ার ভিডিওটি দেখে অফিস সহায়কে তাৎক্ষণিক শোকজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। তাছাড়া নায়েবের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে আসার জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে নায়েব দোষী প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’