মামুন হোসেন সরকার, পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নদীর বিস্তৃত চরে নানান ফসলের সমারোহ। এ উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের সানিয়াজান, কুচলিবাড়ী ইউনিয়নের সিংগীমারী দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা, পাটগ্রাম পৌরসভা, জগতবেড় ও জোংড়া ইউনিয়নের ধরলা নদীতে চর জেগে উঠেছে প্রায় ১৩০ হেক্টর। এ সব চরাঞ্চলে চলছে চাষাবাদ।
গত কয়েকবছরের চেয়ে এবারে দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরে সর্বাধিক আবাদ হচ্ছে। এ চাষাবাদে দেড় হাজারেরও অধিক মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা হবে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষিবিভাগ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র মতে, ‘তিস্তা ও ধরলা নদী বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী। এ নদী দুটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার জেলা হয়ে প্রবাহিত। গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাটের দহগ্রাম ইউনিয়নের বৃহত অংশ জুড়ে বয়ে চলেছে তিস্তা।
অপরদিকে ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ধরলা নদী। পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অংশ জুড়ে প্রবাহিত হয়ে আবারও ভারতে ঢুকেছে।’
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নানাভাবে এ নদী গুলোর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। আবার প্রতিবছরে বর্ষায় অতি বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢলে পানি ছেড়ে দেয়। এতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে নানা ক্ষয়ক্ষতি হয়ে ভোগান্তিতে পড়ে অসংখ্য মানুষ।
গতবছরের ৪ অক্টোবরে ছেড়ে দেওয়া তিস্তা নদীর পানিতে দহগ্রামে প্রবল বন্যা দেখা দেয়। প্রতিবছর দহগ্রামের জমি ভেঙে বিলীন হয় তিস্তায়। জেগে ওঠে মাইলের পর মাইল বালুর চর। এসব বালুর চরে এবারে অধিক পলি পড়েছে। জমি ও বালুর চরের দাবিদার স্থানীয় গ্রামবাসীরা এ বছরে অনেক বেশি চাষাবাদ করছে।
স্থানীয়রা জানায়, দহগ্রামের তিস্তা নদীর লম্বালম্বি/দৈর্ঘ্যে প্রায় ১০ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার চর জুড়ে চলছে চাষাবাদ। সরেজমিনে দেখা গেছে, একরের পর একর আবাদ করা হয়েছে ভুট্টা, চরিষা, গম,পেয়াজ, বাদাম, আলু, মরিচ, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন শাক-সব্জি।
এসব ফসলের খেতে কাজ করছেন কৃষক পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও অন্য কয়েকশত কৃষি শ্রমজীবিরা। কেউ সাময়িক ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র (শ্যালো মেশিন) দিয়ে খেতে পানি দিচ্ছেন। কেউ খেতে নিড়ানি করছেন। আবার কেউ আগাছা তুলছেন এভাবে সন্ধা পর্যন্ত চলে কৃষিকাজ। খেতের পরিচর্যায় সকালে মাঠে যান, সাথে নিয়ে যান খাবার ও পানি। খেতের আইলেই খেয়ে কাজে ফিরে চরের কৃষকেরা।
তিস্তা নদী অববাহিকা সীমান্তে রয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের (বিএসএফ) বেশ কয়েকটি ক্যাম্প। সবসময় এসব ক্যাম্পের একাধিক টহল দলের সৈনিকেরা পালাবদল করে চরে বাংলাদেশিদের আবাদ করা খেতের পাশেই ভারতীয় অংশে সর্তক প্রহরায় থাকতে দেখা গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, এবারে উপজেলার দহগ্রাম তিস্তার চর ও জগতবেড় এবং জোংড়া ইউনিয়নের ধরলা নদীর চরাঞ্চলে ভুট্টা আবাদ হচ্ছে ৬৫ হেক্টর জমিতে।
একইসাথে গম ২৫ হেক্টর, আলু ১৫ হেক্টর, মিষ্টি কুমড়া ৮ হেক্টর, মরিচ ৬ হেক্টর, চিনাবাদাম ৫ হেক্টর ও মিষ্টি আলু ৪ হেক্টরসহ বিভিন্ন জমিতে নানান ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এতে একহাজার ছয়শত ৫৩ মেট্রিক টন ফসল উৎপাদন হবে।
বাউরা ইউনিয়নের কৃষক মতিয়ার রহমান ও হাবিবুল হক বলেন, ‘ সানিয়াজান নদীর চরে আমরা এ বছর ধান, সরিষা, ভুট্টা ও পেয়াজ আবাদ করেছি। চড়ে পলি পড়ায় ফসল ভালো হয়েছে। আমরা খুব খুশি।’
দহগ্রাম ইউনিয়নের কৃষক এরশাদ বলেন, ‘তিস্তা নদী দীর্ঘদিন ধরে ভাঙছে। এবারে পলি বেশি পড়েছে। সবাই বিভিন্ন ফসল আবাদ করেছে, খেতও ভালো হয়েছে। ফলন ভালো হবে আশা করছি।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘ চলতি মৌসুমে নদীর চর গুলোতে পলিমাটি বেশি পড়েছে। এতে কৃষকরা বিভিন্ন প্রকার চাষাবাদ করছে। ফসলও বেশ ভালো হয়েছে। ফলনও ভালো হবে। আমরা অনুমান করছি এসব চরে উৎপাদিত ফসলের মূল্য প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা হবে। উপজেলা কৃষি কার্যালয় হতে চরাঞ্চলে চাষাবাদে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’