লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় লাম্পি স্কিন ডিজিজে (এলএসডি) এক মাসে কমপক্ষে দুই শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা । পাটগ্রাম উপজেলা ছাড়াও লালমনিরহাট জেলার আশপাশের বিভিন্ন উপজেলাতেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে খামারি ও কৃষকদের সচেতন করতে ইতোমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ ও বিভিন্ন প্রকার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে প্রতিষেধক না থাকায় উপজেলাজুড়ে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক খামারি ও কৃষকরা গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।
বাউরা ইউনিয়নের পল্লী প্রাণী চিকিৎসক দেবদাস চন্দ্র সেন ও হোসেনুজ্জামান সরকার বলেন, বাউরা ইউনিয়নে এক মাসে লাম্পি স্কিন ডিজিজে কমপক্ষে ৫০ টি গরু মারা গেছে। অনেকেই এই রোগের আতঙ্কে গরু বিক্রি করে দিয়েছে।,
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গরু রয়েছে। ক্ষুরা রোগের চেয়েও লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) ভয়ঙ্কর। লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসজনিত রোগ।
এটি মশা, মাছি, আঁঠালি মাইটের মাধ্যমে দ্রুত এক প্রাণি থেকে অন্য প্রাণিতে ছড়ায়। এ রোগ নিয়ন্ত্রণে খামার বা গোয়াল ঘর পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা, মশা নিধন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।
খামারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কীটপতঙ্গ, মশামাছি, মাইট নিয়ন্ত্রণ করা। খামারের আক্রান্ত প্রাণি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়াসহ মশারির ভেতরে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বর্তমানে রোগটি এ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে অনেক খামারি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ রোগে আক্রান্ত হয়ে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের এমদাদুল হকের (৫৮) তিনটি গরু, হোসনাবাদ গ্রামের তহিদার (৪০) রহমানের একটি , দহগ্রাম ইউনিয়নের মহিমপাড়া গ্রামের হাফিজুল ইসলামের (৫০) একটিসহ পাটগ্রাম উপজেলায় প্রায় ২০০ শতাধিক গরু মারা গেছে।
উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে বাউরা ইউনিয়নের খামারি এমদাদুল হক বলেন, কয়েক দিনের ব্যবধানে লাম্পি রোগে আমার ৩ গরু মারা গেছে। আরও একটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগে প্রথমে গরুর চামড়ায় গুটি-গুটি ওঠে, পা ফুলে যায়, ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, খাবার খাওয়া বন্ধ করে । এ রোগের সঠিক চিকিৎসা থাকায় সমস্যায় পড়েছি।’
একই ইউনিয়নের হোসনাবাদ গ্রামের তহিদার রহমান (৪০) বলেন, ‘এই রোগে বেশিরভাগ কম বয়সী গরু আক্রান্ত হচ্ছে। আমার দুইটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। একটি মারা গেছে।’
উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মহিমপাড়া গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম (৫০) বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ আগে এই রোগটি তাদের গ্রামে দেখা দিয়েছে। রোগটিতে আমার একটি গরু মারা গেছে।’
পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা: আখিরুজ্জামান শামীম বলেন, ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ইতোমধ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে।
এ রোগে গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা দেখা দেয় এবং গরু খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। অনেক সময় গরুর পা ফুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। তা ছাড়াও প্রচণ্ড জ্বর আসে। এ রোগের ভ্যাকসিন না থাকায় রোগটির প্রকোপ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোতাহারুল ইসলাম বলেন, ‘এ রোগে পাঁচ -ছয়টি গরু মারা যাওয়ার খবর শুনেছি। আমরা এ রোগ সম্পর্কে সচেতন করতে খামারিদের পরামর্শ ও লিফলেট বিতরণ করেছি।’