নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):
এক গৃহবধুকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা হয় মো. আবুল হাসান (২৮) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। মামলা হওয়ার এক সপ্তাহ পরও প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন মামলার প্রধান আসামি। শুধু তা-ই নয়, মামলা তুলে নিতে বাদীর পরিবারকে দিচ্ছেন হত্যার হুমকি-ধমকি।
এমনকি ওই মামলার বাদীর পরিবার ও সাক্ষীদেরকে গরু চুরি এবং পুকুর বিষ প্রয়োগের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টারও অভিযোগ ওঠেছে আবুল হাসানের বিরুদ্ধে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবুল হাসান।
গত শনিবার ওই গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, এলাকায় প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রধান অভিযুক্ত আবুল হাসান। তবে তাঁকে গ্রেপ্তারে তৎপরতা নেই পুলিশের।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত (৯ অক্টোবর) সোমবার আনুমানিক বেলা ১১ টার দিকে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মামলার প্রধান আসামী আবুল হাসান তার প্রতিবেশী লিমন মিয়ার বসত ঘরে ঢুকে তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করে এবং ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। স্ত্রীর চিৎকারে তার স্বামীসহ আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আসামী আবুল হাসান ঘর থেকে বের হয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
পরে এ প্রসঙ্গে আবুল হাসানের বাবা আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে সবুজের কাছে ভুক্তভোগীর স্বামী এই ব্যাপারে বিচারপ্রার্থী হন। কিন্তু আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে সবুজ বিচার না করে উল্টো ক্ষিপ্ত হয়ে ছেলে আবুল হাসান ও তার পরিবারের লোকজন নিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ এবং তার স্বামীকে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করে। এখানেই শেষ নয়, মারপিটে আহতদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইল রামদা ও দেশীয় নানা ধারালো অস্ত্র নিয়ে পথ অবরোধ করে আসামিরা।
পরে ঘটনারদিন বিকেলে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ৪ দিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ভুক্তভোগী গৃহবধূ বাদী হয়ে মো. আবুল হাসানকে প্রধান আসামি এবং এজহারভূক্ত আরও তিনজনকে আসামি করে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী গৃহবধূ। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তদন্ত শেষে গত (১৬ অক্টোবর) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী মামলা নথিভূক্ত করে।
ভুক্তভোগীর স্বামী লিমন মিয়া বলেন, ‘আবুল হাসানের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি না। ভয়ে আমার স্ত্রীকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। মামলা তুলে না নিলে আমাকে এবং আমার পরিবারের লোকদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আবুল ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এলাকাবাসীও মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মামলার সাক্ষীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ায় স্বাক্ষীরাও ভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এ ছাড়াও মামলা তুলে না নিলে নিজেদের গোয়ালের গরু নিজেরাই লুকিয়ে এবং পুকুরে বিষ দিয়ে মিথ্যা মামলায় ধরিয়ে নিয়ে যাবে বলে প্রতিনিয়ত আমাদের হুমকি দিচ্ছে’।
এ অবস্থায় শঙ্কায় দিন কাটছে বাদীর পরিবার ও মামলার সাক্ষীদের।
এ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত ও মামলার প্রধান আসামি মো. আবুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হত্যার হুমকির বিষয়টি সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে বাদী পক্ষ’।
এবিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিএসএম মোস্তছিনুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহ রয়েছে।’