৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি| রাত ১১:৫৭| হেমন্তকাল|
শিরোনাম:
পাইকগাছায় তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতিবঞ্চিত প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির দাবীতে মানববন্ধন পাইকগাছায় নারী স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে দুর্যোগ প্রতিরোধক সরঞ্জাম বিতরণ গফরগাঁওয়ে রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে ফাত্তাহ খানের জনসমাবেশ চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবাগত জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় সভা কৃষকরাই দেশের মূল চালিকা শক্তি- জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোসাইন শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়কে স্বাগত জানিয়ে পাইকগাছায় বিএনপির আনন্দ মিছিল জামিনে বের হয়ে বাদীকে হত্যার হুমকির অভিযোগ শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ে গফরগাঁওয়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল ত্রিশালে সোনার বাংলা ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন

প্রচলিত আইনে দত্তক নয়, সন্তানের অভিভাবকত্ব নেয়া সম্ভব, তাও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, আগস্ট ৭, ২০২৫,
  • 135 Time View

কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্য কোন আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই নীরবে ঘরে ঘরে পালিত হচ্ছে হাসপাতাল থেকে টাকা দিয়ে ক্রয়করা শিশু!দেখার নেই কেউ,ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বানাচ্ছেন জন্ম সনদও।

সকল নারী মা হতে চায়। মা হওয়ার স্বাদ নারী জীবনে মহৎ প্রাপ্তি। আর এই প্রাপ্তি যখন কোন নারীর গর্ভে না আসে তখন তার চেয়ে দুঃখী আর হতভাগী আর কেউ হয় না। একজন বাবাও চান তার ঘরে বংশের প্রদীপ আসুক। কিন্তু যখন এই প্রদীপের আলোর দেখা মেলে না তখন তারা অন্যের সন্তানকে নিজের করে লালনপালন করতে চান। কিন্তু ইসলামিক আইন বা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সন্তান দত্তক বা পালক নেওয়া যায় না, তবে তার অভিভাবকত্ব নেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর war-babies বা যুদ্ধ শিশু দের অভিভাবকত্ব দেবার জন্য ১৯৭২ সালে একটি দত্তক আইন করা হয়। কিন্তু নানা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৯৮২ সালে আইনটি বাতিল করা হয়, এরপর থেকে দত্তক নেওয়ার আইনি বিধান নেই। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় সন্তানের অভিভাবকত্ব নেওয়া সম্ভব। যদিও অভিভাবকত্ব আর দত্তক এক বিষয় নয়।

মূলত শিশু দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইনে কোন বিধান না থাকায় ১৯৮৫ সালের পারিবারিক আইনের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি একটি শিশুর দায়ভার নিতে পারেন একজন অভিভাবক হিসেবে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশের পর শুধুমাত্র হিন্দু আইনে হিন্দু পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে বিষয়টি আইনসিদ্ধ। আর বাংলাদেশের খ্রিষ্ট ধর্মের অনুসারীরাও শুধু অভিভাবকত্ব নিতে পারেন।

শিশুর অভিভাবকত্ব নেওয়ার প্রক্রিয়া:
কোন শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। যেহেতু বাংলাদেশে শিশু দত্তক নেওয়ার জন্য কোন দত্তক সংস্থা (Adoption Agency) নেই। ১৮৭৫ সালের মাইনরিটি অ্যাক্টের ৩ ধারা অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর জন্য ১৮৯০ সালের অভিভাবকত্ব ও পোষ্য (গার্ডিয়ান্স অ্যান্ড ওয়ার্ডস এ্যাক্ট) আইনের ৭ ধারায় কাস্টডি নেওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে ১৯৮৫ সালের ফ্যামিলি কোর্ট অর্ডিন্যান্সের অধীনে এখতিয়ারভুক্ত পারিবারিক আদালতে আবেদন করতে হবে।

প্রথমেই যে বাচ্চাটির অভিভাবকত্ব নিতে চান তার জন্মদাতা বাবা-মা কেউ যদি জীবিত থাকে, তাদের কাছ থেকে অনাপত্তি পত্র অ-প্রত্যাহার যোগ্য হলফনামা এবং বাচ্চার জন্ম সনদ সংগ্রহ করে নোটারি পাবলিক দিয়ে সত্যায়িত করতে হবে। পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে যে এলাকা থেকে নেওয়া হচ্ছে সেই এলাকার এখতিয়ারাধীন পারিবারিক আদালতে অভিভাবকত্ব নেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করতে হবে। এরপর ১২০ টাকা বা নির্ধারিত কোর্ট ফি দিয়ে বাচ্চাটি যেই এলাকায় বসবাস করে সেই এলাকা যে আদালতের স্থানীয় এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত, সেই পারিবারিক আদালতে বাচ্চাটির অভিভাবকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।

সরকারি শিশুমনি নিবাস বা হাসপাতাল বা অভিবাবক শূন্য পরিত্যাক্ত শিশুর অভিভাবকত্ব নিতে হলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিতে পারেন। যিনি বাচ্চাটির অভিভাবকত্ব নিতে চাচ্ছেন তিনি আসলে সঠিক এবং উপযুক্ত কিনা। আদালত সব কিছু বিবেচনা করে ঠিক মনে করলে অভিভাবকত্ব দেওয়ার অনুমোদন দিবেন। আদালত কর্তৃক অভিভাবকত্ব প্রাপ্তির পর দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী পালক পিতা-মাতা সন্তানের বৈধ অভিভাবক হিসেবে গণ্য হবেন।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিদেশীরা শিশুদের অভিভাবক হতে করণীয়
১৯৮০ সালে এ সংক্রান্ত আইনে সংশোধনী এনে বাংলাদেশ থেকে বিদেশিদের শিশু দত্তক নেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে এখন আর বিদেশিরা শিশু দত্তক নিতে পারে না। তবে আইনগত অভিভাবক হতে পারেন। সেজন্যে এক জটিল প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে তাদের যেতে হয়। শুরুতেই যে দম্পতি কোন পরিত্যক্ত শিশুর দায়িত্ব নিতে চান তার জন্য বাংলাদেশের পারিবারিক আদালতে উপরোক্ত নিয়মে অভিভাবকত্বের আবেদন করতে হবে। মামলার শুনানিতে আদালত যদি মনে করে যে, এই দম্পতি শিশুটির মঙ্গলের জন্য অভিভাবক হওয়ার যোগ্য, তাহলে আদালত তাদের আইনি অভিভাবক হিসেবে নিয়োগ করে থাকেন।

এরকম শিশুদের আইনি অভিভাবকত্ব পাওয়ার পর আদালতের অনুমতি নিতে হবে যে শিশুটিকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। আদালত যদি অনুমতি দেন পরবর্তীতে বাচ্চাটার পাসপোর্ট করতে হবে এবং উক্ত পাসপোর্ট করার সময় দেশ ছেড়ে যাবার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি অনাপত্তিপত্র (NOC) নিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তখন বিষয়টি যাচাই করার জন্য গোয়েন্দা বিভাগকে দায়িত্ব দিয়ে থাকেন এবং সমস্ত কিছু যদি ঠিক থাকে ইমিগ্রেশন থেকে তখন বাচ্চাকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে অসুবিধা হয় না।

পালক সন্তানের সম্পত্তির অধিকার
পালক মা–বাবার মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মীয়রা এসে যদি সম্পত্তি থেকে পালক সন্তানকে বঞ্চিত করেন, তাহলে আইনত তার কিছুই করার থাকে না। কারণ মুসলিম আইনে দত্তক সন্তান কোন সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারেন না। তবে পালক পিতা-মাতা চাইলে পালক সন্তানকে সম্পতি হেবা বা দান করতে পারেন। তবে সেটা মোট সম্পত্তির সর্বোচ্চ ৩ ভাগের ১ ভাগের বেশি নয়।

সমাজের সার্বিক উন্নয়নে অভিভাবকত্ব নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ
সমাজের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের অভিভাবকত্ব স্বামর্থবান ব্যক্তিদের নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নিঃসন্তান দম্পতির সন্তানলাভের বিষয়টি তো রইলই, তা ছাড়াও অভিভাবকত্ব গ্রহণের মাধ্যমে একটি শিশুকে উন্নত মানের প্রতিপালনের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি একটি পরিবার দেওয়া যায়। তবে অবশ্যই অভিভাবকত্ব নেওয়া বাচ্চার উপরে যেন কোন অবিচার করা না হয় সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

সেই সাথে মন চাইল আর একটি শিশু দত্তক নিয়ে আসলাম এবং লালনপালন করলাম, এই নীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। যদি কোনো সন্তানের দায়িত্ব কোনো পরিবার নিতে চায় তাকে অবশ্যই পারিবারিক আদালতে অভিভাবকত্ব চেয়ে আবেদেন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইনগত প্রক্রিয়া মেনেই কোন শিশুর অভিভাবক হতে হবে। অন্যথায় পরবর্তীতে কোন জটিলতা দেখা দিলে কিছুই করার নেই।

সূত্র: আইন ক্লাব ও এডভোকেট রীনা পারভিন। আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট।

লেখক: হাসানুর জামান বাবু

মিডিয়া কর্মী, ক্রীড়া সংগঠকও মানবাধিকার কর্মী।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ