মহিউদ্দিন রানা, (নিজস্ব প্রতিবেদক) ময়মনসিংহ:
রোগাক্রান্ত গরু, ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণীর চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিতে প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার কাছে এসেছেন প্রান্তিক কৃষক ও খামারিরা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেও ওই কর্মকর্তার দেখা না পেয়ে সেবা না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন অনেকে।
আবার অনেক সেবা প্রত্যাশীরা অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার অফিস কক্ষেই।
সম্প্রতি সরেজমিনে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে।
এটা শুধু একদিনের চিত্রই নয়, দিনের পর দিন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহাবুবুল আলম সরকারি ডিউটি রেখে ২-৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগতভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকদের পশুর চিকিৎসা করতে যান বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এতে চরম দুর্ভোগে পড়ছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে আসা সেবা প্রার্থীরা। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাহাবুবুল আলম।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের জিয়াউর রহমান নামে এক সেবাপ্রত্যাশী অভিযোগ করে বলেন, ‘ আমার ১ লাখ টাকা মূল্যের একটি ষাড় গরু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। আরেকটা ষাড় গরু কুরবানির হাটে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছি।
কিন্তু সপ্তাহখানেক ধরে গরুটা ঠিকমতো খাবার খাচ্ছেনা, শরীরের বিভিন্ন অংশে এক ধরনের ফোসকা বের হচ্ছে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে বড় ডাক্তারের (প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা) জন্য বেশ কয়েকদিন যাবৎ ঘুরছি।
কিন্তু হাসপাতালে এসে জিজ্ঞেস করলে বলে তিনি নাকি ফিল্ডে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও উনার দেখা মিলছেনা।’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার জন্য অপেক্ষায় থেকে ঘুমিয়ে পড়ছেন সেবা প্রত্যাশীরা
উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের প্রান্তিক খামারি বায়তুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগ ব্যাপকহারে হানা দিয়েছে। ১০-১৫ টি গরু মারাও গিয়েছে। আমারও দুইটা গরু এ রোগে আক্রান্ত। এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের লোকজনকে খবর দিয়েও পাওয়া যায় না।
পরে বাধ্য হয়ে নিজেই প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে আসি। এসে দেখি বড় ডাক্তার নাই। পরে উনার কক্ষে ঢুকে দেখি আমার মতো এমন ভুক্তভোগী আরও অনেকেই বড় ডাক্তারের অপেক্ষায় (প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার) উনার কক্ষে বসে ঘুমাচ্ছে’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পল্লী চিকিৎসক জানান, উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সকালে অফিসে এসে স্বাক্ষর করে হাবিবউল্লাহ নামের এক পল্লী চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে বের হয়ে যান।
হাবিবউল্লাহর মোটরসাইকেল যোগে মাথায় হেলমেট পড়ে চষে বেড়ান উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। দুই-তিন হাজার টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগতভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খামারিসহ প্রান্তিক কৃষকদের পশুর চিকিৎসা করতে যান।
এ বিষয়ে হাবিবউল্লাহ জানান, ২-৩ হাজার নয়, স্যার (প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) দেড় থেকে দুই হাজার নেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহাবুবুল আলম বলেন, ‘ অফিসের প্রয়োজনে প্রায় সময়েই ফিল্ডে যেতে হয়।
যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে অপ্রাসঙ্গিক।’
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘অফিস সময়ে বাহিরে প্রাইভেট চিকিৎসা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সুমারী খাতুন বলেন, ‘অনেক সময় মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ থাকে, যে কারণে অফিস ছেড়ে বাহিরে যেতে হয়। তবে অফিস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেটে ভিজিট নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’