ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় জি-নাইন কলা চাষ করে করে সফলতা পেলেন আনসার সদস্য মশিউর রহমান। পৌরসভার সাহাপুর গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে ১বিগা জমি আবাদ করে লক্ষ লক্ষ টাকা লাভবান হয়েছেন তিনি।
ইউটিবে এ কলা দেখে বাগান করার পরিকল্পনার করেন আনসার ও ভিডিপি দলনেতা কৃষক মশিউর রহমান। তাঁর এ আগ্রহের কথা জানার পর উপজেলা সাহাপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোফাখারুল ইসলাম তাঁকে গুরুত্বপূর্ণ কৃষি দিকনির্দেশনা দিলে জি-৯ কলা উৎপাদন করেন অল্প সময়ে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন গবেষনার এ কলা বৃহত্তর ময়মনসিংহের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের অন্যতম সহজ প্রকল্প বলে জানান ফুলপুর উপজেলা কৃষি অফিস।
জানা যায়, উপজেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে মাত্র ১৬০টি উন্নত কলার চারা সংগ্রহ করেন চাষি মশিউর রহমান। এ চারার সাথে পেঁপে,বেগুন সহ আরো কয়েকটি জাতের সবজি চাষ করলেও কলার কোন অসুবিধা হয়নি। প্রতিটি ছড়ির সাথে প্রায় ১৮০-২০০টি কলা পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সকল খরচ বহন করার কথা জানান চাষি মশিউর রহমান। মাত্র ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হলেও প্রায় লক্ষাধিক টাকার উপরে কলা বিক্রি করে লাভবান হওয়ার কথা জানান তিনি।
ফুলপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, জি-৯ কলা প্রচলিত সাগর কলার মতোই দেখতে। এ কলার জাত
বাণিজ্যিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠার অন্যতম কম খরচে বেশি লাভবান। ফলে দেশের কৃষকরা
অতিসহজেই এ জাতের কলার দিকে আগ্রহ বাড়ছে।
এ জাতের কলা চারা উৎপাদিত হয় টিসু কালচারের মাধ্যমে। জি-৯ কলাগাছ চারার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ঝড়-বাতাসের ভেঙ্গে না,ফলে কৃষকের অধিক লাভের সুযোগ বেশি।
এ জাতের কলা সুস্বাদু ও রোগ প্রতিরোধী। একটি গাছ থেকে প্রায় প্রায় ২০০টি কলা পাওয়া যায়। বছরে ৩ বার ফলন । গাছের আকার সাধারণত মাঝারি। কলা পাকার সাথে সাথে আকর্ষণীয় রং ধারণ করে। কলার গায়ে কোন দাগ পড়ে না।
কৃষক মশিউর রহমান বলেন, সম্প্রতি কলা গাছ কাটা হয়েছে। এ গাছের গোড় বা মোতা তুলে নিয়ে পরিস্কার করে
পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার পর যতগুলো চোখ রয়েছে কেটে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক
চারা বের করা হয়।
তিনি জানান জি-৯ কলার পরবর্তীতে আরো বড় ধরণের প্রক্লপ হাতে নেওয়া হয়েছে।বর্তমানে
২বিগা জমিতে এ চারা রোপন করার কথা জানান কৃষক মশিউর রহমান।
জি-নাইন বাগানের লাভ দেখে নিজ উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন আনসার সদস্যদের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে এ
কলার চারা। তাছাড়া শিক্ষক, সাংবাদিকসহ সাধারণ কৃষকের মাঝেও এ জি-৯ কলার চারা বিতরণ করা হয়েছে বিনা
খরচে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, নতুন জাতের কলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন তারা। বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে কম খরচে মশিউর রহমানের এ চাষপদ্ধতি খুব ভালো লাগায় তারাও এ কলাচাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান অধিকাংশ
কৃষকরা।
উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা মৌসুমী আক্তার বলেন, আনসার সদস্য মশিউর রহমান খুবই মেধাবী।
কৃষিকাজে তাঁর বেশ আগ্রহ। বিনা খরচে প্রতিটি আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মাঝে এ জি-নাইন কলার চারা
বিতরন করার ফলে এ কলাচাষে সবাই খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. ফারুক আহাম্মেদ বলেন, এ জাতের কলার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি উচ্চ ফলনশীল।
একটি ছড়িতে প্রায় ২০০টি কলা পাওয়া যায়। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া কৃষকের ক্ষতির কোন আশাঙ্কা নেই।
ময়মনসিংহ জেলার বীজ প্রত্যয়ন অফিসার ও সাবেক ফুলপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আলমামুন বলেন,ফুলপুর উপজেলায় আমার মাধ্যমে এ জি-৯ কলার একটি প্রকল্প কৃষক মশিউর রহমানের বাড়ির পাশে দেওয়া হয়।
বর্তমানে এর সফলতা দেখে ভালো লাগছে। বাড়ির প্রতিটি প্রাঙ্গনে এ চারা রোপন করলে সবাই অর্থনৈতিকভাবে
লাভবান হবেন।