ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার শতাধিক বছরের জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়ার ঐতিহাসিক কওমী মাদরাসায় দুর্নীতি ও অনিয়ম এনে শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষক মুহতামিম এর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করছেন। দেশের অন্যতম কওমী এ মাদরাসায় রয়েছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী।
তাছাড়া মাদরাসা পরিচালনার জন্য সূরা কমিটি থাকলেও ঘন ঘন আন্দোলনে মাদরাসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাদরাসার বিষয়ে বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে যা এ প্রতিষ্ঠানের সাথে কোন মিল নেই। ফলে এ মাদরাসার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা রয়েছে চরম আতঙ্কে। শিক্ষকদের দাবি দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়াসহ নানা অভিযোগ মুহাতামিম এর বিরুদ্ধে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মুহতামিম মাও. ওয়াইজ উদ্দিন বলেন, অবৈধ সুবিধা না পাওয়া কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বনোয়াট তথ্য প্রকাশ করছে যার কোন ভিত্তি নেই। এ ধরণের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ মাদরাসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে ও ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার জন্য হুমকি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বালিয়া মাদরাসা ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এর খেলাফত প্রাপ্ত মাওলানা সৈয়দ ফয়জুর রহমান (রহ.) ও মাওলানা দৌলত আলী (রহ.) ১৯২৮ সালে বালিয়া মাদরাসা স্থাপন করেন।
জানা যায়, আশরাফ আলী থানভী (রহ.) এর অনুমোদন নিয়ে তাঁর হাতে দেওয়া মাটি নিয়ে বালিয়া গ্রামে গড়ে তুলেন এ মহান ব্যক্তির নামে জামিয়া আরাবিয়া আশরাফুল উলুম বালিয়া মাদরাসা। মাত্র কয়েক বছরে এ মাদরাসার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। সৈয়দ ফয়জুর রহমান মৃত্যুর পর মাওলানা দৌলত আলী এ মাদরাসার মোহতামিম হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর মাধ্যমে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পর্যন্ত উন্নীত করা হয়।
পরবর্তীতে মাওলানা লোকমান(রহ.) মাওলানা গিয়াস উদ্দিন পীর সাহেব (রহ.) শামছুদ্দিন (রহ.) ও আইনুদ্দিন সাহেব এ মাদরাসা দায়িত্ব পালন করেন। বালিয়া মাদরাসা দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সবচাইতে শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছেন পীর সাহেব শায়খে বালিয়া মাও.গিয়াস উদ্দিন (রহ.)। উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম আধ্যাতিক ব্যক্তি সিলেটের নুরুদ্দিন গহরপুরী (রহ.) এর খেলাফতে ধন্য হন তিনি। মাওলানা গিয়াস উদ্দিনকে (রহ.) পীর হিসাবে খেতাব দেন তিনি।
বালিয়ার এ পীর ইউরোপ-আমেরিকা ও উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ-বিদেশে গিয়ে তাফসির-মাহফিল করে তাঁর উপার্জনের কোটি কোটি টাকা বালিয়া মাদরাসাসহ বিভিন্ন মাদরাসার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রেখেছেন।
বালিয়া মাদরাসা বড় সভার পর খতমে বোখারি ও মোনাজাত শেষে বাসায় যাওয়ার পর অসুস্থ্য হয়ে ২০১৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। এ মাদরাসা পরিচালনার জন্য তাঁর মাধ্যমেই সূরা কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে ২৯ সদস্য কমিটি থাকলেও কমিটিকে না জানিয়ে চলছে দফায় দফায় আন্দোলন। সম্প্রতি এ মাদরাসায় মারামারির ঘটনাও ঘটে।
জানা যায়, মাওলানা ওয়াইজ উদ্দিন ২০২০ সালে এ মাদরাসার মুহতামিম হিসাবে দায়িত্ব পান। সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপিসহ স্থানীয়দের মতামত নিয়ে অভিজ্ঞ এ আলেমকে দায়িত্ব দিতে সূরা কমিটিতেও অনুমতি মিলে। মহিলা মাদরাসাসহ ৭০ জন শিক্ষক রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানে।
শিক্ষকদের বেতনসহ বিভিন্ন খাতে বকেয়া থাকায় আন্দোলন এখন ধাপে ধাপে চললেও এ বিষয়টি সূরা কমিটিও জানেনা। এ ছাড়া ৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধি যাদের কাজ ২-৩ মাস পরপর সূরা কমিটিতে রিপোর্ট পেশ করার । এত কিছুর পর কেন এ আন্দোলন ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
মুহতামিম জানান, যোগদানের পর ১৯০ ফুট লম্বা ভবন করছেন তিনি।এ আর্থিক যোগান দিযেছেন এক শিল্পপতি। বর্তমান সংসদ সদস্যর মাধ্যমে ৪ তলা ভবন ও ১৩০ ফুট লম্বা টিন সেট ঘর পুন:নিমার্ণ করা হয়। মাদরাসার উত্তর পাশে একটি বিশাল পুকুরের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও অনেক উন্নয়ন করা হয় মুহতামিমের সময়ে।
বালিয়া মাদরাসার প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক হাবিবুর রহমান জানান, কোন অভিযোগ থাকলে কমিটিকে জানালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আন্দোলন করলে এ প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিছাড়া আর কিছুই না। মাদরাসায় যোগদানের পর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করছি।
বালিয়া মাদরাসার সূরা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ইকরামুল হক তালুকদার বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সূরা কমিটি সবাই যোগ্যব্যক্তি হিসাবে অভিজ্ঞ মাও. ওয়াইজ উদ্দিন কে মুহতামিম হিসাবে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে এ মাদরাসার উন্নয়নের জন্য তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। অহেতুক আন্দোলন করা হলে কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বালিয়া মাদরাসার মুহতামিম ওয়াইজ উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের বেতনের ব্যপারে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা ঠিক না। প্রায় ৭৩ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে ২০২৩-২৪ সালে। তিনি বলেন, যতদিন দায়িত্বে থাকবো অবৈধ সুবিধা কাউকে দেওয়া হবে না। আমার বিরুদ্ধে করা বাকী অভিযোগ তদন্ত চলছে দেখবেন কে দোষী।