ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি । গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল বন্যার শঙ্কা ক্রমাগতই বাড়ছে। উপজেলার সিংহেশর ও সদর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
তাছাড়া ভাইটকান্দি, রামভদ্রপুর, রুপসী, ছনধরা ইউনিয়নের কয়েকহাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যন্ত জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ বেড়িবাঁধ ও ব্রীজ ভেঙে যাওয়ার ফলে উপজেলার অধিকাংশ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা হুমকির মাঝে রয়েছে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে খরিয়া ও কংশ নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কংশ নদীর ডেফুলিয়া-বাঁশতলা, সরচাপুর, ঠাকুরবাখাই নদী এলাকায় চরম ভাঙনের সৃষ্ঠি হয়েছে।
নদী এলাকার শতশত মানুষ কষ্টে জীবন- যাপন করছে। চরাঞ্চলের মানুষেরা নৌকায় ঘরের জিনিসপত্র, গবাদি পশু সরানোর ব্যবস্থা করছেন। জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নের পাঁকা-কাঁচা রাস্থার মারাত্মক ক্ষতি হযেছে।
উপজেলার রুপসী, বালিয়া, বওলা, ভাইটকান্দি, ছনধরা, রামভদ্রপুরসহ নিম্ন-অঞ্চলের এসব এলাকার সড়কে পানি ওঠে সড়কে বড় বড় গর্ত হয়ে মানুষের চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
নিচু এলাকার সবজির ইউনিয়ন হিসাবে পরিচিতি ভাইটকান্দি, রামভদ্রপুর ও নগরবেড়া, বাশতলা গ্রামের সবজিক্ষেত ও আমনধানের বীজতলা ডুবে গেছে। এতে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। গতকাল পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন সহায়তা পৌঁছানোর খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে অঝোরে বর্ষষ ও পাহাড়ি ঢল থামছেই না।
গতকাল সরেজমিনে কংশ নদীতে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পানি দ্রত বাড়ছে। এ নদীর মাঝি মাছুম মিয়া জানান, নৌকায় সেলুমেশিন দিয়ে পারাপার করছেন অত্যান্ত ঝুঁকির মাঝে। বুষ্টির মাঝে নৌকায় পানি ওঠছে। নদীর বাসিন্দারা জানান, শতশত পরিবার নিয়ে তারা কষ্টে আছেন। সরকারিভাবে কোন সহায়তাও দেওয়া হয়নি।
এদিকে অতিবৃষ্টির সুযোগে সড়ক পথে চলছে এলাহি কান্ড। গণপরিবহন সংকট থাকায় বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েেেছ। গতকাল সকাল থেকে বৃষিটপাত কম হলেও আকাশে কালোমেঘের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
গতকাল সিংহেশর ইউনিয়ন ও সদর ইউনিয়নের মানুষের মাঝে নৌকা দিয়ে বন্যাপ্লাবিত এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান ফুলপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান। এ সময় এসব এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলেন তিনি। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার আশ্বাস দেন।
এছাড়া সিংহেশর ইউনিয়ন আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত থাকার কথা তিনি জানান। প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজে এসব বন্যাকবলিত এলাকায় ওসির উপস্থিতে লোকজন কষ্টের মাঝেও কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেন।
এ সময় কৃষক মজিবুর, হাকিম, শেফালীসহ অনেকেই জানান, গবাদি পশুর খাবার নিয়ে চরম সঙ্কটে রয়েছে। আমনধানের বীজতলাসহ সবজির মারাত্মক ক্ষতির কথা জানান তাঁরা। সরকারিভাবে সহায়তার দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা ।
ফুলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুর আহাম্মেদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে আবারও প্রণোদনার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।
ফুলপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আশীষ কর্মকার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সরকারি সহায়তা করার জন্য জানানো হয়েছে।
ফুলপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেহেদী হাসান ফারুক বলেন, বন্যাপ্লাবিত এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের সাথে কথা বলা হয়েছে। তাঁদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা করার চেষ্টা চলছে।