মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ)
সনাতন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গোপূজো। উৎসবের আমেজকে
রাঙিয়ে দিতে প্রতি বছরের মতো এবারও ব্যতিক্রমী আয়োজনে ৫শ’ দরিদ্র-অসহায় ও ক্রয়সামর্থ্যহীন সনাতন পরিবারের মাঝে পূজোর উপহার তুলে দিয়েছে ‘মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
আজ (২২ অক্টোবর) রোববার সকালে ফ্রি হাটের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর প্রদীপ চন্দ্র দাস। এসময় উপস্থিত ছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান, আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রুপকসহ সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আঠারবাড়ি মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এ কর্মসূচির। সেখানে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন স্থানীয় সনাতন ধর্মের শিশু-কিশোরসহ বয়োজ্যেষ্ঠরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে তাঁদের উপস্থিতির সংখ্যাও। ফ্রি হাট থেকে পূজোর উপহার নিতে আসা নারী-পুরুষদের আলাদা বসার জন্য দুই সারিতে চেয়ারের ব্যবস্থাও রাখা হয়। তার পাশেই ছিল বিশাল প্যান্ডেল করা সাতটি স্টল। একেক স্টলে একেক রকম পূজোর পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা।
পূজোর উপহার হিসেবে পুরুষদের জন্য ছিল- লুঙ্গি, পান্জাবী এবং নারীদের জন্য শাড়ি, চুড়ি, আলতা, সিদুর, সাবান ও শিশুদের জামা, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ প্রতিটি পরিবারের জন্য তেল, চিনি, সেমাই, নারিকেলসহ শিশুদের জন্য বেলুন। এছাড়াও সনাতন সম্প্রদায়ের শিশুদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করতে তাঁদের জন্য আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সনাতন ধর্মীয় বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় আকর্ষণীয় পুরস্কার।
ফ্রি হাট থেকে পূজোর উপহার নিতে আসা বাসন্তী রাণী বর্মন নামে এক নারী বলেন,’ বর্তমান সময়ে জিনিসপাতির যে দাম, আমাদের মতো গরীব মানুষের দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকাটাই যেখানে কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে দুর্গাপূজার আমেজ তো বহুদূরের কথা! এই দুঃসময়ে উপহারগুলো পেয়ে কি পরিমাণ ভালো লাগছে বলে বুঝাতে পারবোনা। মনে হচ্ছে স্বামী-সন্তান নিয়ে এবারের দুর্গাপূজো ভালোই কাটবে’।
শুধু একজন বাসন্তী রাণীই নন, বর্তমান বাজারে জিনিসপাতির লাগামহীন দামে হিমশিম খাচ্ছে সকল শ্রেণির মানুষ। তাই নিজেদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গোপূজোয় বিনামূল্যে এতগুলো উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত উপহার নিতে আসা সকলেই।
মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি সংগঠক অনিক কুমার নন্দী বলেন- ‘ আমাদের এই আয়োজনটা ক্রয়সামর্থ্যহীন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য। শারদীয় দুর্গোৎসবটা যেন তাঁরা একটু ভালো কাটাতে পারে সেজন্য আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আশাকরি আমাদের উপহারগুলো পেয়ে তাঁরা কিছুটা হলেও উপকৃত হয়েছে’।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিউটের সহযোগী অধ্যাপক প্রফেসর প্রদীপ চন্দ্র দাস বলেন, ‘ মুক্তির বন্ধন ফাউন্ডেশন প্রতিটা ঈদ এবং রমজান মাসে ফ্রি হাটের আয়োজন করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য বিনামূল্যে পূজোর উপহারের ব্যবস্থা করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। যা নিঃসন্দেহে একটি মহতি এবং প্রশংসনীয় কাজ। ভবিষৎে এ কাজ আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে এমনটিই প্রত্যাশা’।