৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| সন্ধ্যা ৬:২৯| গ্রীষ্মকাল|
শিরোনাম:

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে নোবিপ্রবি শিক্ষকের প্রতারণা

Reporter Name
  • Update Time : বুধবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৪,
  • 570 Time View

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ( নোবিপ্রবি) বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।

ওই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী তারই শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন।

এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বুধবার (২৩ অক্টোবর) নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের কাছে আবেদন করেছেন ওই ছাত্রী।

আবেদনপত্রে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৪ মার্চ ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ তিন মাস তিনি আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক জড়ানোর জন্য মানসিক অত্যাচার করে। পরবর্তীতে আমি তার সাথে যোগাযোগ করতে না চাইলে ও সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক দিলে সে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকতেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে কল দিয়ে তিনি বলতেন তোমাকে পেলে তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। পরে তিনি আমার মায়ের নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন দিয়ে বলেন পৃথিবীর সব সুখ আপনার মেয়েকে দিবো, কোনো স্বামী এই পৃথিবীতে দিতে পারবে কিনা আমি জানি না, তাও আমার মা নিষেধ করে দেন।

এমন করে করে তিনি আমাকে গিল্টের মধ্যে ফেলে দিতেন এবং মানসিকভাবে আমি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একটা পর্যায়ে ভাবতে থাকি আমার কারণে একটা মানুষ এতো কষ্ট পাচ্ছে। ২০২৩ সালের ১১ মার্চ তিনি তার পিএইচডি ছেড়ে আমার কারণে দেশে চলে আসেন এবং বলেন আমার আশপাশে থাকলেই তিনি ভালো থাকবেন। আমার একাডেমিক লাইফে ক্ষতির সম্ভাবনা, মোস্তাফিজুর রহমানের প্রতিনিয়ত কান্নাকাটি ও জোরাজোরি এবং নানান বিষয়ে ডিপ্রেশনে থাকার কারণে তার সাথে সম্পর্কে যেতে রাজি হই। আমার সাথে তার সম্পর্ক চলতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মে। এর মধ্যে কয়েকদফা তিনি আমাকে একা একা বিয়ে করে ফেলার কথা বলেন কিন্তু আমি বলেছি ফ্যামিলিকে জানাও তারপর বিয়ে করবো। ২০২৪ সালের কুরবানি ঈদের সময় থেকে তিনি পরিবারে জানান এবং তার ভাষ্যমতে তার পরিবার রাজি হয় না। এমধ্যে আমার পরিবারকে জানাই এবং সকলে সম্মতি প্রকাশ করে আমাদের বিয়ের জন্য। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবত তিনি আমাকে বোঝাতে থাকেন তার পরিবার অন্যত্র পাত্রী দেখছেন, কিন্তু তিনি আমাকেই চান।

গত ৮ এবং ৯ অক্টোবর আমার খালামনির সাথে কথা বলেন মোস্তাফিজ এবং বলেন তার ফ্যামিলি ছেড়ে আমাকে বিয়ে করবেন, আমাকে আগামী ২/৩ বছরেও স্ত্রী বলে পরিচয় দিবেন না কোথাও এবং ছাত্রীকে বিয়ে করার কারণে যদি তার চাকরি যায় আমি আয় করে উনাকে খাওয়াতে হবে, আমার পরিবার উনার দায়িত্ব নিতে হবে এবং তিনি এখন একাই বিয়ে করবেন আমাকে কাজী অফিসে কেউ যেতে পারবে না আমার পরিবারের। আমার পরিবার আমার দিকে তাকিয়ে তার সব শর্তে রাজি হয়। পরবর্তীতে ১১ অক্টোবর শুক্রবার তিনি বিয়ে করবেন বলে ঢাকা যেতে বলেন। তার কথা বিশ্বাস করে ঢাকা যাই। কিন্তু তিনি নানা তালবাহানা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তার বাবা অসুস্থ বলে আমার থেকে তড়িঘড়ি বাড়ি যাবে বলে বিদায় নেয়। আমাকে বিদায় দেওয়ার সময় জড়িয়ে ধরে কপালে চুম্বন করে বলে “আমি আমার বাবাকে দেখে এসে তোমাকে বিয়ে করবো ময়না, আমার অপেক্ষা করিও, আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো বিয়ে ওইটা ভাঙানোর, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি”। পরবর্তীতে জানতে পারি তার বাবা অসুস্থ হয়নি। বরং ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামে তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করেন যার সাথে তার ৩ মাস আগের থেকেই সম্পর্ক ছিলো।

ভুক্তোভুগী শিক্ষার্থী অভিযোগপত্রে আরো লিখেন, তার বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়ি। পরে ১৪ তারিখ আমি চট্টগ্রাম চলে যাই এবং উনার বউ এর নাম্বার সংগ্রহ করে রাতের ৯:৩০ -১১:৪৫ নাগাদ উনার এবং উনার বউ এর সাথে আমার দেখা হয় আগ্রাবাদ জাম্বুরী পার্কের সামনে। শেষ দিকে উনার বউ আমার বান্ধুবির সাথে কথা বলছিলো এমন সময় মোস্তাফিজ আমাকে বলে যে একটু কাছে আসো,” তুমি কি চাও? আমি বললাম আমি তোমাকে চাই” উনি বললো “তুমি আমার বউ এর কাছে যা যা বলে গেছো এরপর ও আর আমাকে রাখবে না, ও আমাকে ছেড়ে দিলে তুমি আমাকে গ্রহণ করবা তো?” আমি বললাম ” হ্যাঁ করবো”। সেখান থেকে আসার পর ১৫ অক্টোবর সকাল থেকে আমি মানসিকভাবে খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং উনার বউকে কল দিয়ে উনাকে ছেড়ে দিতে বলি কিন্তু তারা একসাথে বলে তারা কেও কাওকে ছাড়বে না। দুপুর দিকে আমার শারীরিক অবস্থার খুবই অবনতি ঘটে এবং আমাকে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদের মা ও শিশু হাসপাতাল ভর্তি করায় বান্ধুবির পরিবার। সেখানে আমার পরিবার আসে এবং আমাকে ১৬ তারিখ ডিসচার্জ করা হয় কিন্তু বাসায় আসার পর অবস্থা আরো অবনতি হয়।

ভুক্তভোগী ছাত্রী এই ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক গড়ে তুলে এমন প্রতারণা করায় আমি এবং আমার পরিবার মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এর বিচার চাই৷

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা তবে তার সাথে আমার কথা হতো এটা মিথ্যা না। সে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে চেয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, একজন ছাত্রীর অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত করে বিধিমত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ