মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের ত্রিশালে বুক-পেট জোড়া লাগা যমজ সন্তান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আলামিন-ফরিদা দম্পতি।
গত ৩ জুলাই বিকাল তিনটার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে দুই শিশুর জন্ম দেন ফরিদা নামের এক গার্মেন্টসকর্মী। তাদের নাম রাখা হয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌসী ও ফাতেমা আক্তার।
এই দম্পতির নয় বছর বয়সী সীমা আক্তার নামে আরেক কণ্যা শিশু রয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে ত্রিশালের বইলর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামে দেখতে লোকজন ভীড় জমায়।
ফরিদা ফুলবাড়িয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ইচাইল গ্রামের আলামিনের স্ত্রী। আলামিন-ফরিদা দম্পতি গাজীপুর জেলার সখিপুরের ময়েজউদ্দিন টেক্সটাইল মিলে চাকরি করতেন।
এ বিষয়ে আলামিন-ফরিদা দম্পতির সাথে কথা বলে জানা যায়, যমজ সন্তান হবে জানলেও জন্মের কয়েকদিন আগেও তারা জানতো না তাদের জোড়া লাগা সন্তানের জন্ম হবে। জন্মের দুই ঘন্টা পরই হাসপাতাল থেকে এই শিশু দুটিকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে রাখা হয় ৯ দিন। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা ছুটি দিয়ে দেয়। কিন্তু অর্থের অভাবে গত ছয়দিন ধরে এই যমজ শিশু দুটি তাদের নানার বাড়ি ত্রিশালের বৈলর চরপাড়ায় অবস্থান করছে। সন্তানদের বাঁচাতে আলামিন-ফরিদা দম্পতি সকলের সহযোগিতা চেয়েছেন।
যমজ নবজাতক কন্যা শিশুদের নানী রেজিয়া খাতুন বলেন, জন্মের পর দেখা যায় তারা যমজ কন্যা শিশু। কিন্তু তাদের দু’জনের বুক ও পেটের অংশ জোড়া লাগানো। আমাদের পরিবারের পক্ষে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। আমি সরকার ও সমাজের উচ্চবিত্তদের সহযোগিতা কামনা করছি।
যমজ সন্তানের মা ফরিদা আক্তার বলেন, ‘আমার সন্তানদেরকে আমি কোলে নিতে পারতেছিনা, বুকের দুধ খাওয়াতে পারছি না, একজন মা হিসেবে এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে। চিকিৎসকেরা দ্রুত আমার সন্তানদেরকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে বলেছেন। এ জন্য অনেক টাকা প্রয়োজন। আমরা সবার সহযোগিতা আশা করছি।’
শিশুদের বাবা আলামিন বলেন, ‘আমরা ভালোই চলছিলাম। আমরা দু’জনই গার্মেন্টসে কাজ করতাম। আল্লাহর ইচ্ছায় হঠাৎই এমন ঘটনা ঘটলো। আমার স্ত্রী কয়েকমাস ধরে কাজে না যাওয়ায় চাকরি হারিয়েছে। এখন আমারটাও যাওয়ার পথে। ওদের (যমজ শিশু) জন্মের সময় ওজন ছিল সাত কেজির কিছু বেশি।
এই কয়েকদিনে চার কেজির মতো চলে এসেছে ওজন। চোখের সামনে সন্তানদের এমন পরিস্থিতি দেখে কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না। আল্লাহই জানে কি হবে।’
হাসপাতালের চিকিৎসক নিবেদিতা রায় বলেন, আমরা আল্ট্রাসোনোগ্রামে যা পেয়েছিলাম তাতে যমজ শিশুদের দুটি বডির একটি হার্ট। কিন্তু কিডনি দুইটা। এখন তাদের যে ধরনের চিকিৎসা দরকার সেটা ময়মনসিংহে নেয়, ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।