জ. ই পরশ, ভৈরব প্রতিনিধি:
ভৈরবে কাপড় ব্যবসার আড়ালে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে অনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে নারীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে সুমন সাহার মালিকানাধীন ভৈরব পৌর নিউ মার্কেটের ফ্যাশন রুম নামে কাপড়ের দোকানটি ১মাসের জন্য তালাবদ্ধ করেন পৌর নিউ মার্কেট কতৃপক্ষ।
এসময় সুমন সাহাকে আগামী তিনমাস ভৈরব পৌর নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়াসহ তার দোকানের শপিংব্যাগ জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলার সিন্ধান্ত নেন ব্যবসায়ীরা।
আজ ১৮ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) বেলা ১২টায় পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এসব সিন্ধান্ত নেন। পরে সুমন সাহার বড় ভাই বিপ্লব সাহাকে ডেকে এনে তাদের সিদ্ধান্ত জানান এবং বিল্পব সাহার উপস্থিততে দোকানটি তালাবদ্ধ করে অভিযুক্তকে সতর্ক করা হয়।
এসময় নিউ মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী বিয়ে বাজার নামে কাপড়ের দোকানের সত্ত্বাধিকারী জনি সাহা ও মনে রেখো শাড়ী ঘরের সত্ত্বাধিকারী এসএম অন্তর বিশ্বাসকে সতর্ক করা হয়।
জানা যায় জনি ও অন্তরসহ আরো অনেকের বিরুদ্ধে সুমন সাহার মতো নিজ নামের টাইটেল গোপন করে মুসলমান পরিচয় দিয়ে মুসলিম সম্ভ্রান্ত্র পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
ভৈরব পৌর নিউ মার্কেটের সভাপতি হাজী মো: দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভের সার্বিক সঞ্চালনায় জরুরি সভায় উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ সভাপতি শওকত চিশতী, সহ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক তানভীর আহমেদ, আদিল উদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, অর্থ সম্পাদক ইমন মোল্লা, ক্রীড়া সম্পাদক মনির হোসেন, কার্যকরী সদস্য মোবারক হোসেনসহ অন্যান্য সদস্যরা।
উল্লেখ্য, গত ১৪ এপ্রিল, রবিবার বিকেলে নরসিংদীর গাবতলী এলাকায় এক নারী কাস্টোমারের সাথে অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্যে তার ফ্ল্যাট বাসায় গেলে প্রতারক চক্রের মুলহোতা কাপড় ব্যবসায়ী সুমন সাহাকে স্থানীয় লোকজন আটক করে মারধর করেন।
আটক অবস্থায় ফ্যাশন রুম সুমন নামে তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক আইডিতে লাইভে নিজের অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করে সে।
ওই ফেসবুক লাইভ মূহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে নেটিজেনসহ ভৈরবের সাধারণ মানুষের মাঝে। সেখানে কয়েক ঘন্টা আটক থাকার পর মুচলেকা দিয়ে ভৈরব থেকে লোকজন গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনে।
অভিযুক্ত সুমন সাহা তার নিজ নামের সাহা টাইটেল ও ধর্মের কথা গোপন করে পাঞ্জাবি- টুপি পরিধানের মাধ্যমে নিজেকে মুসলিম পরিচয়ে দিতো তার দোকানে আসা নারী ক্রেতাদের।
সে দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার ও প্রবাসীর স্ত্রীদের টার্গেট করে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে এমন অভিযোগ তোলেন খোদ ভৈরব বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী।
অভিযোগ রয়েছে, সুমন সাহার নেতৃত্বধীন ভৈরব বাজারের ১২/১৫জন হিন্দু যুবকের একটি চক্র তাদের দোকানে আসা মহিলা কাস্টোমারদের ফোন নাম্বার নেয়ার পর তাদের সাথে সম্পর্ক করতো।
মুসলমান নারীদের বিপদগামী করতে ওই প্রতারক চক্রটির মূল টার্গেট হলো মুসলিম পরিবারের মহিলা ও প্রবাসীর স্ত্রী। অনেক মহিলা তাদের ফাঁদে পড়ে অর্থ ও ইজ্জত হারিয়েছেন।
মানসম্মানের ভয়ে মুখ খুলেননা ভুক্তভোগীরা। হিন্দুধর্মালম্বীর প্রতারক যুবকদের সাথে কতিপয় স্থানীয় মুসলিম যুবকদের যোগসূত্র আছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
অভিযুক্ত সুমন সাহার নিজ ফেসবুক আইডিতে দেয়া পোস্টে জানা যায়, ওই নারীর নাম নারগিস আক্তার অনু। তিন সন্তানের জননী তিনি। চার বছর আগে ভৈরব নিউ মার্কেটে অভিযুক্ত সুমন সাহার কাপড়ের দোকানে কাপড় কিনতে আসার সুবাদে পরিচয় হয় তাদের।
ওই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায়ই নরসিংদী গিয়ে রেস্টুরেন্টে দেখা করতো তারা। ওই ভুক্তভোগী নারী সুমনকে মানা করার পরও তাকে নিয়মিত বিরক্ত করতো সে।
অনৈতিক কাজের উদ্দেশ্য ওইদিন ভুক্তভোগী নারীর বাসায় গেলে স্থানীয়রা তাকে আটক করেন। আটকের পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করে প্রতারক সুমন সাহা।
এ ঘটনায় ভৈরব বাজারের সাধারণ ব্যাবসায়ী, ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত সুমন সাহাসহ প্রতারক চক্রের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবির প্রেক্ষিতে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় দোকান তালাবদ্ধ ও নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেন পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সুমন সাহা বলেন, ওই মহিলার কাছে কাপড়ের টাকা বকেয়া ছিলো। টাকা আনতে নরসিংদী গাবতলীতে তার বাসায় গেলে ওই নারীর স্বামী মামুনসহ ১০/১২জন লোক তাকে আটক করে মারধর করেন।
এসময় তাদের কথামতো ফেসবুক লাইভে গিয়ে এসব স্বীকার করেন তিনি। আটক অবস্থায় ৫০হাজার টাকা, খালি চেক ও স্ট্যাম্পে সই রাখেন তারা। ওইদিন রাতেই ভৈরব থেকে লোকজন গিয়ে তাকে ছাড়িয়ে আনেন।
এ বিষয়ে ভৈরব পৌর নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ বলেন, সুমন সাহার বিরুদ্ধে আগেও অনেক অভিযোগ ছিলো।
নরসিংদীতে নারী কেলেংকারীর ঘটনাটি মিডিয়ায় প্রচার হলে মার্কেট কমিটির নজরে আসে। সুমন সাহার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য মার্কেটের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হওয়ায় কমিটি জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেয় সুমন সাহার মালিকানাধীন কাপড়ের দোকান ফ্যাশন রুম ১মাসের জন্য তালাবদ্ধ থাকবে এবং আগামী তিনমাস সুমন সাহাকে নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
সেই সাথে নিউ মার্কেটের আরো দুইজন হিন্দু ব্যবসায়ীকে সতর্ক করা হয়েছে।
ভৈরব ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো: দেলোয়ার হোসেন বলেন, সুমন সাহা তার ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন নারীদের সাথে অনৈতিক কাজে জড়িত ছিলো।
নরসিংদীতে নারী কেলেংকারীর ঘটনা তোলপাড় সৃষ্টি করে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে জরুরি মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নেই সুমন সাহার দোকান ১মাস বন্ধ থাকবে এবং সুমনকে তিন মাস নিউ মার্কেটে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো: দেলোয়ার হোসেন খান জানান, এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি এবং ঘটনাটি জানিনা। তবে অনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি হয়, তাহলে তো প্রতিরোধ করতে হবে। যারা ভুক্তভোগী তারা যদি অভিযোগ করে তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো। তারপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।