জ.ই পরশ, ভৈরব প্রতিনিধি:
পুলিশের দাবিকৃত ২০ হাজার টাকা পরিশোধের বিনিময়ে থানা থেকে মেয়ের লাশ বাড়িতে নিতে হলো ভুক্তভোগী এক অসহায় পিতাকে। গত ৭ জুলাই শুক্রবার ভৈরব থানায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত পুলিশ ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল হক। তার বিরুদ্ধে নিহতের পিতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি প্রদান ও এক জনপ্রতিনিধির মুঠোফোন ছুড়ে ফেলার অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী পিতা মো: আক্তার হোসেন ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের জগমোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার মেয়ে মোছাঃ সোনিয়া আক্তারকে (২৮) বিয়ে দেন একই উপজেলার কালিপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মোর্শিদ মিয়ার পুত্র মো: আরমানের নিকট।
তাদের সংসারে দুই মেয়ে ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর জানতে পারেন মেয়ের জামাই আরমান একজন মাদকসেবী ও মাদক কারবারি। সে বিভিন্ন সময় স্ত্রী সোনিয়াকে তার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য মারধর করতো। পরিবারের লোকজনও মানষিক ও শারিরীক নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ উঠে।
নির্যাতন সইতে না পেড়ে বাবার কাছে থেকে বেশ কয়েকবার টাকাও এনে দিয়েছেন স্বামী আরমানকে।
গত ৭ জুলাই কালিপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী নয়াহাটি গ্রামের একটি নির্জন জায়গা থেকে তিন সন্তানের জননী সোনিয়া আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ভৈরব থানা পুলিশের এসআই মাজহারুল হক।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ সোনিয়া আক্তারকে স্বামী আরমান ও তাঁর পরিবারের লোকজন নির্যাতন করে মেরে ফেলে এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য পাশ্ববর্তী নয়াহাটি নামক নির্জন জায়গায় গাছের সাথে ওরনা দিয়ে ঝুলিয়ে রাখে।
পরবর্তীতে ভৈরব থানার এসআই মাজহারুল হক ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠান। এ বিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নিহতের পিতা আক্তার হোসেন মামলা করতে চাইলে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর মামলা করতে হবে বলে জানান এসআই।
ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় সোনিয়ার লাশ ভৈরব থানায় আসলে এসআই মাজহারুল হক লাশ হস্তান্তরের কথা বলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন। পরে লাশ আটকিয়ে রেখে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা ছাড়া লাশ না দেয়ায় বাধ্য হয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে এসআই মাজহারুল হককে তার দাবিকৃত টাকা প্রদান করে মেয়ের লাশ বাড়িতে নিয়ে দাফন করেন ভুক্তভোগীর পিতা।
পরদিন শনিবার থানায় এসে এসআই মাজহারুল হককে মামলা করার কথা বলতেই এসআই জানান, সোনিয়া মারা যাওয়ার ঘটনার দিনই ভৈরব থানায় অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হয়েছে। নির্যাতন করে মেরে ফেলার ঘটনায় কেন অপমৃত্যুর মামলা হবে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী পিতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, ভয়ভীতি ও মামলায় ঢুকিয়ে দিবে বলে হুমকি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
ওসির সাথে দেখা করার কথা বললে গালিগালাজ করে থানা থেকে বের করে দেন এবং সাথে থাকা এক জনপ্রতিনিধির মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে মারেন। প্রকৃত ঘটনাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করার শর্তে অভিযুক্ত আরমান মিয়ার নিকট হতে ৩ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগী আক্তার হোসেন অভিযোগ করেন।
আগানগর ইউপি পরিষদের মেম্বার মো: জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, নিহত সোনিয়ার বাবাসহ তিনি ঘটনার দিন রাতে থানায় আসেন লাশ নেয়ার জন্য।
এসময় পুলিশ ভুক্তভোগীর কাছে লাশ হস্তান্তর করতে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আক্তার হোসেন কমলপুর গ্রামে তার আত্মীয়র কাছে থেকে টাকা ধার করে এনে এসআইকে দেয়। পরদিন মামলা করতে থানায় আসলে এসআই জানান অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড হয়েছে। এসময় এক অফিসারের নিকট ফোন করার সময় হাত থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে মারেন।
তিনি এসব ঘটনার বিচার দাবি করেন। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের অবগত করেন নিহত সোনিয়া আক্তারের ভুক্তভোগী পিতা মো: আক্তার হোসেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভৈরব থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল হক টাকা নেয়ার বিষয়টি সত্য নয় দাবি করেন এবং এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।