মাহিদুল ইসলাম ফরহাদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি:
চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদ শুকিয়ে যাওয়ায় পাড়ের মানুষের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জেলেরা মাছ ধরে ও মাঝিরা নৌকা বেয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মহানন্দা নদীর এই দুরাবস্থায় পূর্বপুরুষের পেশা পরিবর্তন করে অনেকে ভিন্ন পেশায় ঝুঁকেছেন। আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার সঙ্গে মিলে গেছে একসময়ের খরস্রোতা মহানন্দা নদীর বর্তমান চিত্র।
এই নদীর বুক দিয়ে এখন পায়ে হেঁটে ও মটরসাইকেল চালিয়ে পার হওয়া যাচ্ছে। অথচ একসময় নদীর এ পার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে পার করতে হতো বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহন ও জনসাধারণ। সব সময় খেয়াঘাটের নৌকায় ভিড় লেগে থাকত।
নদী তো সংকীর্ণ হয়েছেই। শুষ্ক মৌসুমেও নদীতে এখন হাঁটুপানিও নেই। দীর্ঘ চর পড়েছে নদীর এই পার থেকে ঐপার। এক পাশ দিয়ে বয়ে চলা ১৫ ফুটের সামান্য খালের মতো সৃষ্টি হয়েছে। এই সামান্য হাঁটুপানি পার হলেই নৌকা ছাড়াই এপার থেকে ওপারে যাওয়া যায়। মানুষ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য পায়ে হেঁটে নদী পার হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার চককীত্তি ইউনিয়নের চকনরেন্দ্র গ্রাম হয়ে মহানন্দা নদী পার হলেই নাচোল উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের মল্লিকপুর পৌঁছানো যাচ্ছে পায়ে হেঁটেই।
জেলার উত্তর দিক থেকে ভোলাহাট উপজেলার শরীর পেঁচিয়ে গোমাস্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে পূর্বে নাচোল উপজেলা ও পশ্চিমে শিবগঞ্জ উপজেলা হয়ে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার পদ্মা নদীর মোহনায় মিলিত হয়েছে মহানন্দা। নদীর তীরবর্তী এলাকা বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত না হলেও তীব্র ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। প্রমত্তা মহানন্দার করাল গ্রাস বহু বছর ধরে নিঃস্ব করেছে নদীপারের শত শত মানুষকে। ফলে নদীপারের মানুষকে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হয় প্রত্যেক বর্ষা মৌসুমে।
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় ঘরবাড়ি আর না ভাঙার বিষয়টিকে কিছু মানুষ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। মহানন্দা পারের মানুষ নদীর বুকে কোথাও কোথাও ধান ,গম, ভুট্টা সহ অন্যান্য ফসলেরও আবাদ করেছে। কোথাও বা ধু-ধু বালুচর।
জেলার সদর উপজেলার দিয়াড় ধাইনগর গ্রাম চর অংশে গিয়ে দেখা যায়, নদীপারের কৃষকরা ছাগল-গরু নিয়ে এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করছে। বালু ও পলিমাটি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর তলদেশ। সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে পানিপ্রবাহ। মহানন্দার বুকে চর জাগছে একের পর এক ।
জেলে শ্রী জয়কুমার ও শ্রী রতন সময় খবরকে বলেন, বর্ষায় মহানন্দা নদী বিশাল আকৃতির হয়ে যায়। শুকনো মৌসুমে যা চেনাই যায় না। যেহেতু পানি থাকে না। তাই মাছ ধরা বাদ দিয়ে দিন মজুরী করি। অপেক্ষায় আছি কবে নদীতে পানি আসবে। মাছ ধরব রাত জেগে।’
মল্লিকপুর ঘাট ইজারাদার আলহাজ্ব সাইফুদ্দিন বলেন, আমার বাড়ী চকনরেন্দ্র গ্রামে, মহানন্দা নদী এরকম কখনো দেখিনি। আগে নদীতে ১০-১৫টি নৌকা চলাচল করত। মাঝিরা নৌকা চালিয়ে ও জেলেরা মাছ শিকার করে সংসার চালাত। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এখন অনেকই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমার দাবী মহানন্দা নদী পনঃ খনন করে তার আগের রুপে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীকট আবেদন জানাচ্ছি।
জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ময়েজ উদ্দিন বলেন, মহানন্দা নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেলায় এই সময় এলে পানি শুকিয়ে যায়। পক্ষান্তরে বর্ষাকালে নদীভাঙ্গনে অনেক ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। তাই খননের কোনো পরিকল্পনা নেই। তিনি আরো বলেন, মহানন্দা নদীতে যেন সারা বছর পানি থাকে সেজন্য আমরা রাবার ড্রাম স্থাপন করেছি। আগামী জুন মাসে উদ্বোধন হবে বলে মনে করছি।