১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৬ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| রাত ১:৪৯| শরৎকাল|

মাধবদীতে গৃহবধু সানিয়া হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, আগস্ট ১২, ২০২৩,
  • 174 Time View

মনিরুজ্জামান, নরসিংদী:

নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে গৃহবধূ সানিয়া আক্তার’র হত্যার বিচারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্দন করেছে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় লোকজন।

শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার কাঠাঁলিয়া ইউনিয়নের ডৌকাদী গ্রামে এই সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহতের চাচা মাসুদ রানা।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২৯-০৩-২২ ইং তারিখে রাত পৌনে বারোটায় আমার ভাতিজি সানিয়া আক্তার প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে বের হলে একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে সোহাগ তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে পাশ্ববর্তী পুকুর পাড়ে নিয়ে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় আমরা মাধবদী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে পুলিশ তাকে আটক করে জেলহাজতে পাঠায়। পরে বিয়ের শর্তে তাকে জামিনে মুক্ত করে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু সোহাগের মা-বাবা তাদের এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি।

বিয়ের পর থেকেই তারা যৌতুকের জন্য আমার ভাতিজির উপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে। বাধ্য হয়ে আমরা তাদের চাওয়া পূরণ করতে জামাইরা গাড়ি কেনার জন্য ৬০ হাজার টাকা সহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার পূরণ করে আসছি। কিন্তু যৌতুকের লোভ তাদের এতটাই পেয়ে বসেছে যে এর জন্য সর্বশেষ তারা আমার ভাতিজিকে সাড়ে তিন মাসের একটি ছোট্ট শিশু রেখে মেরে ফেলেছে।

তারা আমার ভাতিজিকে মেরে তার মৃত্যুকে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে। তার মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হলে আমরা বিষয়টি মাধবদী থানা পুলিশকে অবগত করি। মাধবদী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায় এবং বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মাধবদী থানার এসআই রনিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আমরা নিহতের স্বামী, শাশুড়ি ও শ্বশুরকে আসামী করে মামলা করতে চাইলে এস আই রনি আসামী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার ভাতিজা রিপনের কাছ থেকে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে একজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করে এবং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা করেছে বলে রিপোর্ট দেয়।

এসময় ঘটনার পুনঃতদন্ত করে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ গত শুক্রবার (৪ আগস্ট) ডৌকাদি গ্রামে শ্বশুর-শ্বাশুরী ও স্বামী মিলে সানিয়াকে হত্যা করেছে। এরপর তারা স্থানীয় থানা পুলিশ ম্যানেজ করে এটি আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। সানিয়ার ভাই রিপন মিয়া মাধবদী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত সানিয়া উপজেলার কাঠাঁলিয়া ইউনিয়নের ডৌকাদী গ্রামের মৃত শফিউল্লাহ’র মেয়ে। অপরদিকে অভিযুক্ত সোহাগ মিয়া একই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। সানিয়া হত্যা মামলায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে গত শনিবার বিকেলে সোহাগকে আদালতে দিয়েছে থানা পুলিশ।

নিহতের ছোট ভাই হযরত আলী বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে তার বোন সানিয়াকে মারধর করে হত্যা করেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

তিনি আরো বলেন, প্রায় সময় শ্বশুর, শ্বাশুরি ও সোহাগ এবং তার বোন সহ সানিয়াকে মারধর করতো। সবশেষ গত শুক্রবার বিকেলে তারা আমার বোন সানিয়াকে হত্যা করেছে বলে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি সানিয়ার মরদেহ বসত ঘরের সামনে মাটিতে রাখা আছে। এসময় সোহাগ ও তার পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পরে গ্রামবাসির সহায়তায় সোহাগকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়।

সানিয়ার বড় ভাই রিপন মিয়া বলেন, বোন হত্যার বিচার চেয়ে মাধবদী থানায় মামলা করেছেন তিনি। কিন্তু ওই মামলায় এস আই রনি তাকে টাকার বিনিময়ে বিষয়টি আপোষ করে ফেলতে অনুরোধ করে। তিনি এতে রাজি না হওয়ায় রনি সামীদের পক্ষ নিয়ে শুধু সোহাগকে আসামী করে মামলা দায়ের করার পাশাপাশি এটিকে আত্মহত্যা বলে রিপোর্ট দেয়।

এসময় নিহত গৃহবধূ সানিয়া আক্তার’র হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকার পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ