৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৩:৩৮| শরৎকাল|

মাধবদীতে সুদি ইব্রাহীমের কাণ্ডে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, আগস্ট ১৪, ২০২৩,
  • 202 Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীতে সদর উপজেলার মাধবদীর প্রত্যন্ত গ্রাম আলগী কান্দাপাড়ায় সুদি ব্যবসায়ী ইব্রাহীমের কাণ্ডে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। তার মধ্যযুগী নির্যাতন আর অত্যাচার ও মিথ্যা মামলায় আসামি হয়ে একাধিক ভুক্তভোগি এখন বাড়ি ছাড়া রয়েছেন। এই সুদি ইব্রাহীমের ক্ষপ্পর থেকে বাঁচতে মাধবদী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আব্দুল খালেক নামে এক দিনমুজুর।

আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিনে সদর উপজেলার নুরালাপুর ও কাঁঠালিয়ার সিমান্তবর্তী ওই প্রত্যন্ত গ্রাম আলগী কান্দাপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, একই গ্রামের আব্দুল গাফফারের ছেলে মো. ইব্রাহীম হোসেন। এলাকায় সুদি ইব্রাহীম হিসেবে বেশ পরিচিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কাঁঠালিয়া ইউনিয়ন শাখা কমিটির আহ্বায়ক ইব্রাহীম। তার রয়েছে ব্যাপক সাঙ্গুপাঙ্গুর দল। এই সুদি ইব্রাহীমের খপ্পরে পড়ে হতদরিদ্র পরিবারের অনেকে সর্বস্বান্ত হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, আলগী কান্দাপাড়া গ্রামের দক্ষিণ পাড়া সমাজের জামাই আব্দুল খালেক, পিতা আব্দুল খোরশেদ ও আইয়ুব আলী, পিতা মৃত সদর আলী ( সদু ), কাঁঠালিয়া গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে শহরবানু ও ব্যাঙা বাড়ির রূপ মিয়ার ছেলে ইসমাইল মিয়া। ডৌকাদী গ্রামের ইসব আলীর ছেলে নুর ইসলাম, মৈষাদী গ্রামের মৃত মোজাফফর এর ছেলে শাহ আলম সহ আরো অনেকে এই সুদি ইব্রাহীমের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

এর মধ্যে শহরবানু, নুর ইসলাম বাড়ি ছাড়া হয়েছেন ও ইসমাইল মিয়ার জমি ঘ্রাস করেছে ইব্রাহীম। শাহ আলমের কাছ থেকে খালি স্ট্যাম ও একটি চেক নিয় পতারণা করে দশ লাখ টাকার মামলা দিছে। একই কায়দায় শহরবানুকে মামলা দিছে। আবুল খালেককে জিম্মি করে ৮টি চেকে স্বাক্ষর নিছে এই সুদি কারবারি।

আলগী কান্দাপাড়া দক্ষিণ পাড়া সমাজের একাধিক বাসিন্দারা জানান, তার পেশা হলো সুদে টাকা দেয়া। ইব্রাহীম প্রথমে সহযোগিতা করার নাম করে ফাঁদ তৈরী করেন। এই ফাঁদে পরেন এলাকার অসচ্ছল নিরীহ মানুষ, সংসারে টানাপোড়ন আছে এমন পরিবার। এই নিয়ে এই সমাজে একাধিক বিচার শালিস হয়েছে কিন্তু নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে গেছে ইব্রাহীম। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। ইব্রাহীম কাঠাঁলিয়া গ্রামের হতদরিদ্র রূপ মিয়ার ছেলে ইসমাইল মিয়াকে মামলা মোকাদ্দমা ও প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে বাড়ি দখল করে নিয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে মানসম্মানের ভয়ে কেউ আইনের দারস্থ হতে চায় না।

মাধবদী থানায় ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন দিনমজুর আব্দুল খালেক। তিনি বলেন, সংসারে টানাপোড়ন, দোকানে ধারদেনা পরিশোধ করার জন্য ইব্রাহীমের কাছ থেকে ফেরত দেয়া শর্তে ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়। পরে ওই টাকার জন্য আমাকে জিম্মি করে জোরপূর্বক আটটি খালি চেক ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। এ বিষয়ে আমি আইনের সহযোগিতা নিতে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

প্রতারনার শিকার শাহ আলম জানান, আমি মুদি মনোহরীর দোকান চালাই, ইব্রাহীম মাঝে মধ্যে আমার এখানে বসে থাকতো। একটা সমিতি থেকে ঋন উত্তোলন করবো কিছু টাকা শর্ট ছিলো। তখন ইব্রাহীম পাশে বসা ছিল। সে আমাকে স্বেচ্ছায় টাকা হাওলাদ দেয়। পরে তার পরিচিত সমিতি থেকে টাকা উত্তোলন করে দেয়ার নাম করে খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়। এবং আমার চেক বইয়ের মোড়িতে আশি হাজার টাকা লিখে ইব্রাহীম খালি চেক নেয়। ওই চেকে আমার সামনে টাকার অংক না লিখে চলে যায়। আমি তার কাছে জিম্মি হয়ে যাওয়ায় মানসম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে প্রায় এক বছরে তার টাকা পরিশোধ করি। কিন্তু সে আমার চেক ফেরত না দিয়ে আদালতে মামলা দেয়। সে আমার সাথে বড় প্রতারণা করেছে। ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানান তিনি।

এলাকায় বিচার শালিস করেন মো. পনির হোসেন। ইব্রাহীমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আলগী কান্দাপাড়া গ্রামে সুদি কারবারি হিসেবে পরিচিত ইব্রাহীম। তার বিরুদ্ধে একাধিক শালিস করেছি আমরা। কিন্তু কারো কথা আমলে নিচ্ছে না সে। তার সুদের ব্যবসায় দিনদিন অতিমাত্রায় চলে গেছে।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন আগে কাঁঠালিয়া ইউনিয়নের ডোকাদি গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে নুর ইসলামকে সুদের টাকার জন্য মারধর করেছে। এছাড়া কান্দাপাড়া গ্রামের সবদর আলীর ছেলে আইয়ুব আলীকেও সুদের টাকার জন্য পিটিয়ে আহত করেছে। এবার আব্দুল খালেক এর কাছ থেকে জোরর্পূবক ৮টি চেকে স্বাক্ষর নিয়েছে ইব্রাহীম। এই বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে।

দিনমুজুর আব্দুল খালেক রোজ দিয়ে ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে শালিস ডাকতে যায় কান্দাপাড়া এলাকার আলমগীর হোসেন এর কাছে। তিনি জানান, ইব্রাহীম সুদের ব্যবসা করে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। আমাদের গ্রামের একজনের কাছ থেকে আশি হাজার টাকা পাবে ইব্রাহীম। কিন্তু খালি চেক নিয়ে দশ লাখ টাকা মামলা দিছে। এলাকার জামাই আব্দুল খালেক এর কাছ থেকেও নাকি খালি স্ট্যাম্প ও চেক নিয়েছে ইব্রাহীম।

ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে এ বিষয়ে মাধবদী থানার ওসি (তদন্ত) তারিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল খালেক নামে একজন ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সুদি ইব্রাহীম বলেন, প্রতি সপ্তাহে এক হাজার টাকার বিনিময় ৩৫ টাকা সুদ নেন তিনি। মৈষাদি গ্রামের শাহ আলম আমার থেকে ৮০ হাজার নিয়েছে। এখন সুদে-আসলে অনেক টাকা হয়েছে।
টাকা না দেয়ায় একটি খালি চেক ও তিনটি খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছি। এরপর সময়মত টাকা না দেয়ার কারণে আদালতে দশলাখ টাকা পাবো বলে মামলা করেছি। এদিকে আব্দুল খালেক ও অন্যান্যদের বিষয়ে জানতে চাইলে ইব্রাহীমের মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে ভুক্তভোগী হতদরিদ্র পরিবারের চেক, স্ট্যাম্প উদ্ধার পূর্বক ও মিথ্যা মামলা গুলো প্রত্যাহার করা সহ। প্রতারক সুদি কারবারি ইব্রাহীমকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন মানববাধিকার কর্মীসহ স্থানীয় গণ্যমান্যরা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ