নরসিংদী প্রতিনিধি:
নরসিংদী রায়পুরার কালিকাপুর মেঘনা নদী এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেন ব্যবসায়ী সুলতান মিয়া,বাবুল মিয়া, আফজাল হোসেন, মোঃ তোফাজ্জল হোসেন, মো: আল আমিন সিন্ডিকেট। এমন কাজে বাধা দেওয়ায় মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানসহ স্থানীয় এলাকাবাসীর নামে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, চাঁদাবাজির নামে করা এ মামলায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানসহ ২০ জন এলাকাবাসী ও অজ্ঞাত আরো ২০-৩০জনকে আসামী করা হয়েছে।
স্থানীয়রা ও আসামি নাসির মিয়া জানান, রায়পুরার চাঁনপুরের সুলতান, কালিকাপুরের বাবুল মিয়া,নবীনগরের আফজাল মিয়া ও মোঃ তোফাজ্জল হোসেনদের সঙ্গে বালু উত্তোলনের একটি সিন্ডিকেট বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রায়পুরার কালিকাপুর, চাঁনপুর,সদাগরকান্দি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছিলো।
ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার ফলে এই এলাকা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে স্থানীয় এলাকাবাসীও দীর্ঘদিন ধরে দফায় দফায় বালু উত্তোলনে বাঁধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাঁদাবাজির নাটক সাজিয়ে এলাকাবাসীর নামে মিথ্যা মামলা করেছে নবীনগরের মীর মো: তোফাজ্জল হোসেন।
এদিকে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) আনুমানিক সকাল ১০টায় নবীনগরের বীরগাঁও কেদেরখোলা বালু মহাল সংলগ্ন মেঘনা নদীর পূর্ব পাড় এলাকায় বালু উত্তোলনের সময় বিবাদী ও অজ্ঞাত নামা ২০-৩০ জন এসে মামলার বাদী ও স্বাক্ষী মোঃ আল আমিন ও সুমন মিয়া গণকে দেশীয় অস্ত্রসহ নিয়ে ঘেরাও করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তাঁরা চাঁদা না দিলে কয়েজনের উপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে, কিল-ঘুষি ও মারধর করে ড্রেজার ভাংচুর করে ২ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন, ২০ লাখ টাকার মালামাল ও ১০ লাখ ৫০ হাজার নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় বিবাদীরা। তাঁরা চিৎকার করলে বিবাদীরা ভয়ভীতি দেখিয়ে চলে যায় বলেও উল্লেখ করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান বলেন, “এই বয়সে এসে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দ্বারা মামলার আসামি হয়। বলার কিছু নেই। পচাত্তর বছর বয়সে পৌছেছি, আসামি হয়েও যদি আমার এলাকা বাঁচে আসামি হওয়াতে দুঃখ নেই।”
তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা এলাকাবাসীর কাজ না,তবুও তারা তাদের ভিটেমাটি বাচাতে দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন।
স্থানীয় রায়পুরার চাঁনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোমেন সরকার বলেন, মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মামলায় উল্লেখিত ঘটনা ঘটার প্রশ্নই আসে না। আমার এলাকার লোকজন তাদের হামলায় হতাহত হয়েছে, উলটো তাদের নামে মামলা। আমার এলাকায় বালু মহাল নেই, নবীনগরের কেদেরখোলা বালু মহাল থাকলেও উত্তোলন বন্ধে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ব্যাবসায়ীরা যত্রতত্র বালু উত্তোলন করে,বাঁধা দিলে মামলা। এসব প্রহসন ছাড়া কিছুই না।
নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমেদ জানান, বালু উত্তোলনকারী জোরপূর্বক বালু উত্তোলন করে। তাঁরা তাদের সীমানা মানে না।
এগুলো নিয়ে প্রশাসনের ধারেধারে বহু ঘুরেছি এবং সাংবাদিক সম্মেলন করেছি। প্রশাসনের কারো কারো ছত্রছায়ায় তারাঁ যেখানে -সেখানে বালু কাটে।
মামলার বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাহবুব আলম বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। বিবাদীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁরাও সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করবেন। তদন্তে সত্যতা মিলবে।”
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান বলেন, ‘হতাহতের ঘটনায় কেউ অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে আইনি ব্যাবস্থা নেবো। তবে আগামী বৃহস্পতিবার রায়পুরা উপজেলা প্রশাসন ও নবীনগর উপজেলা প্রশাসন (ডিমার্গেশন) সীমানা চিহ্নিতকরণ করতে যাবেন বলে জানি।’
বালু উত্তোলনে বৈধ সীমানায়ও হাইকোর্ট এর নিষেধাজ্ঞা আছে জানালে তিনি বলেন, এই ধরনের অফিশিয়াল নথি আমাদের কাছে আসেনি,আসলে ব্যাবস্থা নেবো।
এ বিষয়ে রায়পুরার নির্বাহী কর্মকর্তা আজগর হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এর আগে ঘটনার বিষয়ে তাঁর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। কোনরকম হতাহতের ঘটনা তিনি পাননি।’