নান্দাইল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাবাসীর জনজীবন। দিনভর হালকা কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল বাতাসে এ অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আর এ তীব্রতায় দুস্থ, অসহায়, ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। তবে এসব অসহায় মানুষদের জন্য ‘দেবদূত’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন নান্দাইল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান। রাতের আঁধারে তীব্র শীত উপেক্ষা করে কম্বল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড আর গ্রামাঞ্চলে। এ পর্যন্ত নিজ হাতেই তিনি বিতরণ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কনকনে শীতে চরম বিপাকে পড়ছেন নান্দাইল উপজেলার অসহায়, গরিব-দুঃখী শীতার্ত মানুষ। আর এসব গরিব-দুঃখী শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে শীতার্ত মানুষের বাড়িতে গভীর রাতে কম্বল নিয়ে হাজির হচ্ছেন ফয়জুর রহমান। কনকনে শীতের মধ্যে হঠাৎ যখন উপজেলা সহকারী কমিশনার নিজ হাতে শীতবস্ত্র মানুষের দরজায় হাজির হচ্ছেন, তখন ছিন্নমূল দুঃস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধী মানুষেরাও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ছেন। তাদের কেউ আবেগে গলায় জড়িয়ে ধরছেন, কেউ বা পানি-খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করতে চাইছেন।
শীতবস্ত্র পাওয়া স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে একজন এসিল্যান্ড গভীর রাতে গিয়ে অসহায় মানুষের ঘরে গিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন। তাই তো উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে তারা বলছেন, একদিকে যেমন সরকারি কর্মকর্তার হাতে কম্বল পেয়ে আপ্লুত, অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ঘরে বসেই গুণগত মানের কম্বল পেয়ে বেশ আনন্দিতও তারা।
কম্বল পেয়ে খুশি ইয়াসমিন বেগম নামে এক নারী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে অনেক শীত পড়ছে। ঘরে যা আছে তা দিয়ে শীত মানছে না। আমাদের ঘরে কামাই করার মতো মানুষ নাই। শীতে কম্বল কিনতে পারি না। রাতে এসিল্যান্ড স্যার কম্বল বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। এতে আমাদের সবার উপকার হবে।
সোহেল মিয়া বলেন, কয়েকদিন ধরে শীত পড়ছে। আমি রাতে পিঠা বেচি। আগুনের কাছে থাকলেও শীত কমে না। অনেক শীত করে। কম্বল পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে।
এমন উদ্যোগের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন, শীতে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষদের অনেক কষ্ট হয়। তাদের অনেকের শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটায়। তাদের শীত নিবারণের কোনো ভালো ব্যবস্থা থাকে না। যদিও সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতি বছর অসংখ্য শীতবস্ত্র বিতরণ হয়, কিন্তু প্রকৃত দুঃস্থদের হাতে সেগুলো খুবই কম পৌঁছে। তাই আমি চেয়েছি যারাই প্রকৃতপক্ষে সুবিধাবঞ্চিত, তারাই যেন ঘরে বসে এই উপহারটি পেয়ে যায়। একারণেই আমি নিজ হাতে এগুলো নিয়ে বাড়িবাড়ি ঘুরছি।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগে আমার বিশেষ কোন কৃতিত্ব নেই। আমি শুধু আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। সরকারি নির্দেশনায় আমাদের এই শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
প্রসঙ্গত, একটা সময় ঘুষ ছাড়া হতো না জমির খারিজ। কিন্তু বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি নান্দাইল উপজেলায় যোগদানের পর থেকেই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে ভূমি অফিসে। সাধারণ মানুষ ঘুষ ও হয়রানি ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন। ভূমির সঠিক মালিক সরাসরি তার জমি খারিজ করতে পারছেন। এতে করে যেমন সঠিক জমির মালিকানা প্রাপ্তদের জন্য তার জমির খারিজ পেতে সহজ হচ্ছে, ঠিক তারই বিপরীতে অবৈধ দখলদার ভূমিদস্যু ও দালাল চক্রের সদস্যদের জন্য জমির খারিজ করা অসম্ভব হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এসব কর্মকাণ্ডের কারণে ইতিমধ্যে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান উপজেলার সর্বমহলে একজন সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।