২রা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ১৬ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৩:০৩| শীতকাল|

লালমনিরহাটে দুই শিশুকে হাত-মুখ বেঁধে পাশবিক নির্যাতন

বিশেষ প্রতিনিধি:
  • Update Time : শনিবার, মে ১৮, ২০২৪,
  • 63 Time View

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের ওকড়াবাড়ির খামারবাড়ি এলাকায় সুপারি চুরি সন্দেহে আসিফ (৮) ও  শরিফুল(৯) নামের ক্লাস থ্রি পড়ুয়া দুই শিশুকে বেদম পিঠিয়েছে সাগর ভ্যান্ডার (৩৫) নামের এক বখাটে যুবক। সাগর ভ্যান্ডার ওই এলাকার মৃত- আইয়ুব আলী ভেন্ডারের ছেলে। নির্যাতিত শিশু দ্বয় আসিফ ও শরিফুল একই এলাকার মোশারফ হোসেন ও আমিনুর ইসলামের ছেলে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শুক্রবার (১৭মে) আনুমানিক বিকাল ৪ ঘটিকায় আসিফ ও শরিফুল ওকড়াবাড়ি বাজার সংলগ্ন নিজ এলাকায় খেলা করছিল। ঐ সময় মাদকসেবি সাগর ভ্যান্ডার সুকৌশলে শিশু আসিফ ও শরিফুলকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রথমে তাদের একটি ভুট্টা ক্ষেতের ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।

তাদের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সেখান থেকে তাদের সাগরের বাসায় নিয়ে বেধড়ক লাঠিপেটা ও কিল ঘুসি মারা হয়। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি মাতাল সাগর। দুই শিশুকে হাতপা বেঁধে মুখে গামছা ও টেপ লাগিয়ে মোটরসাইকেলের রড তালা দিয়ে পেটাতে থাকে। এক সময় শিশু দ্বয় মাটিতে লুটিয়ে পড়লে লম্পট সাগর সুযোগ বুঝে সটকে পড়ে। 

সরেজমিনে জানা যায়, সাগর ভ্যান্ডার হারাটী ইউনিয়ন ওকড়াবাড়ি ৫নং ওয়ার্ডের মাদকসেবি ও বখাটে যুবক। ছোট বেলায় পিতাকে হারিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বৃদ্ধা মা কোনভাবেই তাকে মানুষ বানাতে পারেনি। অবশেষে পিতার ভ্যান্ডারী পেশায় নিয়োজিত থেকে একের পর এক কুকীর্তি ঘটাতে থাকে। আর এইভাবে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন রকম মাদক সেবনে। এলাকায় তার অপকর্মের অন্ত নেই।

জানা যায়, সাগর মাদক সেবনের পাশাপাশি মাদক ব্যবসায় জড়িত। এলাকার কয়েকজন জানান, আসিফ ও শরিফুল সুপারি চুরি করছে, তার কোন প্রমাণ দিতে পারেনি সাগর। শুধুমাত্র সন্দেহের উপর ভিত্তি করে শিশু দুটিকে পেটানো হয়। যা যৌক্তিক তো নয়ই বরং গুরুতর অপরাধ। এলাকাবাসী সাগরের সকল অপকর্মের বিচার চায়।

আহত দুই শিশু এখন সুচিকিৎসার জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের ৩য় তলায় ৪২নং বেডে ভর্তি রয়েছে। অবুঝ শিশু আসিফ বলে- ‘আমরা স্কুলে ৩য় শ্রণিতে পড়ি। আমরা চুরি করিনি। কিন্তু সাগর আমাদের জোর করে তুলে নিয়ে যায়। আমি মাইর সহ্য করতে না পেরে বলেছি- ভাইয়া আমি আপনার পায়ে পড়ি, আপনার গু (পায়খানা) খাব তবু আমাদের ছেড়ে দিন।’

আরেক শিশু শরিফুল বলে, ‘আমাদের গলার কাছে ছুরি চালানোর চেষ্টা করা হয়। চুরি করেছি স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু আমরা তো তার সুপারি নেইনি। গরীব বলে আমরা কি মানুষ নই। আমরা এর বিচার চাই।’

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আসিফ ও শরিফুল হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। তাদের চেখে মুখে ভয়ের আতঙ্ক। প্যান্ট খুলে দেখায় মাইরের চিহ্ন। তাদের পিঠে, বুকে ও পশ্চাৎদেশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন। সাবলীলভাবেই বলে নির্যাতনের করুণ বর্ননা। তারা বলে- সাগরের বিচার হোক।

সাগরের মা আছমা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন- এই লম্পট সাগর মানুষ নয়। পশুর চেয়েও অধম। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সাগরের যেন সঠিক বিচার হয় এটাই কামনা।

এবিষয়ে সাগরকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে বহুবার ফোন করলেও পরে তিনি আর কোন কল রিসিভ করেননি।।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ