জনাব আকবর (কাল্পনিক নাম) আজ রবিবার দিবাগত রাত ৪ টায় সময় ঘুম থেকে উঠে বাথরুম সেরে ওযু করে চার রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে যেই সেহেরী করতে যাবে তখনই শুনে মসজিদ থেকে ফজরের আযানের সমধুর ডাক। ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখে সময় রাত ৪:৪৫।
দেওয়ালে টাঙানো পুঞ্জিকা দেখে স্তম্ভিত হয়ে যান। ক্যালেন্ডার দেখাচ্ছে আজকের সেহেরীর শেষ সময় রাত ৪:৪৩, ফজরের আজান ভোর ৪:৪৯ , তাহলে আযান কেন দিলো ৪:৪৫-এ। যাইহোক মাথায় আর আসে না। ফজরের নামাজ মসজিদে জামাতে আদায় শেষে ইমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর আজকের সেহেরীর শেষ সময় ছিল রাত ৪:৪৩, ফজরের আযান ৪:৪৯ তাহলে মাঝের ছয় মিনিটের কী মোজেজা।
হুজুর বললেন সন্দেহ দূর করতে এই ছয় মিনিট আগে-পরে সেহেরীর শেষ সময় এবং আযান। আর তখন জনাব “আকবর’ বললেন, আমি তো এই ছয় মিনিটের গেরাকলে পড়ে আরও একদিন রোজা রাখতে হচ্ছে এক গ্লাস পানিও না পান করে।
জনাব আকবর আবার একজন প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক। ২০২১ সালের মাঝামাঝি শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পান। গতকাল মানে বুধবার শিক্ষা অফিসে মোবাইল ফোন দিয়ে জানতে পারেন এই বছরে(২০২৪ সালে তিন বছর পূর্ণ) তাঁর প্রাপ্য শ্রান্তি বিনোদন ভাতা হচ্ছে না রোজার বন্ধ এগিয়ে আসার জন্য। তিনি একটু চিন্তিত হয়ে যান।
আর ভাবেন এই ভাবে প্রতি তিন বছরের পাওনা যদি চতুর্থ বছরে পান তাহলে ছত্রিশ বছর চাকুরি করলে বারো বছর গণনার বাহিরে চলে যাবে এবং এই বারো বছরের গ্যাপ উনার পাওনা চারটি শ্রান্তি বিনোদন কেড়ে নিবে। এটা কী ধরনের বিড়ম্বনা!! নিশ্চয়ই বৈষম্য বা বঞ্চিত করা অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট থেকে।
জনাব আকবর আবার শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন জানুয়ারি, ২০০৮ সালে। জীবনের প্রথম টাইমস্কেলটি পেতে পেতে পাননি কারণ ২০১৫ সালের চৌদ্দ ডিসেম্বর পর্যন্ত টাইমস্কেল দেওয়া হয়। মাত্র ১৭-১৮ দিনের জন্য কাঙ্ক্ষিত টাইমস্কেল স্কেল পাননি। এরপরে অনেক জল পদ্মা-মেঘনা-যমুনা দিয়ে প্রবাহিত হলো! কথা ছিল দশম ও পনেরোতম বছরে স্বয়ংকীয় ভাবে উচ্চতর স্কেল পাবার। সেই উচ্চতর স্কেলও ষোলো বছরে পাননি একটিও। এই উচ্চতর স্কেল প্রাপ্তি সমস্যা এখন সহকারী শিক্ষকদের (২০০৮, ২০০৯, ২০১০ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত) প্রধান একটি সমস্যা।
প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর মর্যাদার আজও সমাধান হয়নি।
গত তিন বছরে শীতকালীন ছুটি কর্তন হয়েছে দুইবার, এইবার রোজার ছুটি দশদিন কর্তন হলো যা আগে করা পরিকল্পনাতে ছিল না। এই ছুটি বহাল রাখা না রাখা নিয়েও কত কাণ্ড। এসব নিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে জনাব আকবরের কোনো দুঃখবোধ নেই। উনার প্রত্যাশা, যাইহোক পূর্ব পরিকল্পিত হোক, একটা পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা মাঝ পথে যেনো কাটছাঁট না হয়।
শিক্ষকদের অনেক সমস্যা আছে তাও জনাব আকবর জানেন। অনেকেই কর্মক্ষেত্রে নিবেদিত নন। আবার অনেকেই অতিরিক্ত নিবেদন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা নিবেদিত নন তাদের বেতন আরও বাড়িয়ে দিলে যেমন তারা নিবেদিত হবে না। তেমনি বেতন না বাড়ালেও যাঁরা নিবেদিত তাঁদের নিবেদনে ঘাটতি হবে না।
শিক্ষকতা মহান পেশা, এটার মর্ম যাঁদের মধ্যে আছে তাঁরা নিবেদিত হবেই। কিন্তু পেশাগত ভাবে যেসব চ্যালেঞ্জ সমাধান করা যৌক্তিক তা সমাধান না করলে চ্যালেঞ্জের চাপে ন্যুজ হবে প্রাথমিক শিক্ষা।
টাইমস্কেল বা উচ্চতর স্কেল আমাদের অধিকার, দয়া নয়। এটা বন্ধ করে রাখা কোনো ভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। শ্রান্তি বিনোদন ভাতাও আমাদের অধিকার আর সাথের ছুটি যা কাগজে-কলমে আছে কিন্তু ভোগ করা যায় না (অন্য ছুটির সাথে দেওয়া হয়)। যেই ছুটি মেকি সেই ছুটির জন্য কেন শ্রান্তি বিনোদন ভাতা প্রাপ্তি বিলম্বিত হবে? এটার যৌক্তিক সমাধান চান জনাব আকবর।
লেখক
মাহবুবুল আলম
সহকারী শিক্ষক
হাতিরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ও
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ (আনিস-রবিউল)
নরসিংদী জেলা শাখা।