নিজস্ব প্রতিবেদক:
নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশিদ খান হত্যার ঘটনায় করা মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের নাম অন্তভূক্তির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ জুলাই) প্রয়াত চেয়ারম্যানের ছেলে ও মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান তাপস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), ঢাকা রেঞ্জের ডি.আই.জি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস এর উপ পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা, সিআইডি, পিবিআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে এই আবেদন করেন।
আবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন (৬৭), আসাদুজ্জামান (৫৩), জুনায়েদুল হক ভূইয়া (৫৩), ফরহাদ আলম ভূইয়া (৬৪), দেলোয়ার হোসেন ভূইয়া (৫০), সৈয়দ মাসুদ পারভেজ (৪৮), ফারুক খান (৪৬), সিরাজ মিয়া, বাদল মিয়া (৫৫), আশরাফুল ইসলাম রিপন (৪৫), সুমন (৩৭), আমান উল্লাহ ভূইয়া, রাকিবুল ইসলাম ইরফান, কাউছার মিয়া (২৩), শাহাদত হোসেন (৩৯), সেলিম (৩৭), সজিব মোল্লা (৩২), আরমান পাশা (৪২), শাওন খান (২৩) ও বাবুল মিয়া (৫৩) কে এই হত্যা মামলায় আসামী করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
আবেদনে বলা হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান।
ঘটনার পর তাকে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁর পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়।
হামলার ঘটনার দুইদিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদি হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগাঁও এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।
পরে চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসা শেষে ২ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হৃদরোগ, প্রস্রাবে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৭ মে তাকে এভারকেয়ারে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এরপর ১৯ মে রাত ১০ টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) নেওয়া হয়। এরপর ৩১ মে বিকাল ৫টার দিকে চিকিৎক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এদিকে হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত অস্ত্রসহ ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফ (২৮) কে গ্রেফতার করে মতিঝিল থানা পুলিশ। পরে তারা জিজ্ঞাসা বাদে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে জানায়। এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এই তিনজনের নামে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে এজাহারনামীয় দুজন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
আরেক এজাহারভুক্ত আসামী শাকিল কারাগারে রয়েছে। আর এজাহারনামীয় প্রধান আসামীসহ ৪ জন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগীতা চেয়েছে পুলিশ।
এব্যাপারে মামলার বাদী আমীনুর রশীদ খান তাপসের কাছে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এমপি মোহন সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী না করে বরং খুনীদের শেল্টার দিয়ে আসছেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর এমপির ভাই জুনু খুনি আসাদের বাড়িতে গরুর খিচুরি মাংস খেয়ে খুনীদের নিয়ে আমোদ ফুর্তি করে।
এতে প্রমানিত হয় এই জঘন্য হত্যাকান্ডের সাথে এমপি মোহনসহ তাঁর অনুসারীরা নেপথ্য ছিল। তাই তাদের বিচার দাবীতে আমরা এই মামলায় তাদেরকে আসামী হিসেবে দেখতে চাই। তখন কেন আসামী করা হলোনা এমন প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, আসামী করতে চেয়েছিলাম পুলিশের জন্য পারিনি।
এ ব্যাপারে সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহন দু:খ প্রকাশ করে বলেন, মরহুম উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খান ছিলেন আমার পিতৃতুল্য অভিভাবক। তাঁর মৃত্যুতে আমিও আমার অভিভাবক হারিয়ে ব্যথিত। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবী করি।
অবিলম্বে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ হত্যাকান্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে।