নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):
‘দশ মাস বয়সী ফুটফুটে সুন্দর শিশু লাইসা আক্তার ছোঁয়া। সপ্তাখানেক আগে কাঁচামাটিয়া নদী থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। এর সপ্তাহখানেকের মাথায় নিজের শিশু কন্যাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা পপি আক্তার।
নিজের স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ীসহ বাড়ির লোকজনের কাছে এ দায় স্বীকার করলে নিহত শিশুটির বাবা ও পপি আক্তারের স্বামী জিয়াউল হক বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ পপি আক্তারকে গতকাল রোববার গ্রেপ্তার করে
থানায় নিয়ে আসে। পরে আজ (২৮ আগস্ট) সোমবার আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে গত (২২ আগস্ট) মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের হীরাধর এলাকার কাঁচামাটিয়া নদী থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিশু ছোঁয়া ওই এলাকার জিয়াউল হকের মেয়ে।
নিহত শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সাত বছর পূর্বে জিয়াউল হক ও পপি আক্তার দম্পতির বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ লেগেই থাকতো। এ অবস্থায় বিয়ের ছয় বছর পর তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ছোঁয়া।
নিহত শিশুটির পরিবারের ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন ১০ মাস বয়সী শিশু কন্যা লাইসা আক্তার ছোঁয়াকে ঘুম পাড়িয়ে মা পপি আক্তার উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। একটু পর বাবা জিয়াউল হক এসে মেয়েকে খাটের উপর না পেয়ে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘরের পেছনে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ ফুট দূরে কাঁচামাটিয়া নদীতে ভাসমান অবস্থায় মিলে শিশুটির মরদেহ। পরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
ঘটনার দিনেই নিহত শিশুর দাদা আবু সিদ্দিক জানিয়েছিলেন, ‘আমার নাতনী বসতে শুরু করেছে। ঠিকমতো হামাগুড়িও দিতে পারে না। এ অবস্থায় নদীতে পড়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব না। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। একই দাবি জানিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
এ প্রসঙ্গে নিহত ছোঁয়ার বাবা ও পপির স্বামী মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘ আমার মেয়েটি মারা যাওয়ার পর আমার স্ত্রীর অস্বাভাবিক আচরণে সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে আমার স্ত্রী স্বীকার করে আমার দশমাস বয়সী শিশু কন্যাকে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে রেখেছিল’। শিশুটিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে জিয়াউল বলেন, ‘আমি এখন মানসিকভাবে খুব বিপর্যন্ত অবস্থায় আছি। আর কথা বলতে চাই না’।
এ প্রসঙ্গে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে হত্যা মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আজ বিকেলে ওই নারীকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে শিশু কন্যাকে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।’