৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ| ১২ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৪:১৮| শরৎকাল|

শীতে জমজমাট পিঠা-পুলির ব্যবসা, উপার্জনের পথ খুলেছে দরিদ্র মানুষের

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, জানুয়ারি ১৯, ২০২৪,
  • 87 Time View

মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):

কথায় আছে- ‘মাঘের শীতে বাগে পালায়’।
কিন্তু এই মাঘ মাসে যেন কপাল খুলেছে ফুটপাতে পিঠা-পুলি বিক্রেতাদের। মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা যতোই প্রখর হচ্ছে, পিঠা বিক্রেতাদের বিকিকিনি যেন ততোই বাড়ছে।

কেননা- পিঠা প্রেমিদের কাছে শীত মানেই হরেক রকম পিঠা-পুলির স্বাদ। আর পিঠার সেই স্বাদ নিতেই ফুটপাতের দোকানগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন শিশু-কিশোর এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা।

সম্পতি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এবং বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে ভ্রাম্যমাণ পিঠা-পুলির দোকানগুলোতে এমন দৃশ্যের দেখা মিলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, কলা পিঠা, মেরা পিঠা, চেপা পিঠাসহ হরেক পিঠার পসরা সাজিয়ে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়েছেন মৌসুমী পিঠা বিক্রেতারা। তাঁদের মধ্যে- কেউ ভ্যানের ওপর গ্যাসের চুলোয় আবার অনেকেই চৌকির ওপর মাটির চুলোয় তৈরি করছেন সুস্বাদু এসব পিঠা।

শীত বাড়া সঙ্গে জমে ওঠেছে হরেক রকম পিঠা-পুলির বিকিকিনি। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা পিঠা-পুলির দোকানে দেখা মিলে এমন দৃশ্যের। আর শীত আর পিঠার যেন এক অন্যরকম মিতালি। তীব্র শীতে

এসব পিঠা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শীতের তীব্রতা বাড়ায় বেড়েছে শীতকালীন পিঠার কদর।
পাশাপাশি শীত মৌসুমে পিঠা বিক্রির এই ব্যবসা অনেক দরিদ্র মানুষের উপার্জনের পথ খুলে দিয়েছে। এতে একদিকে যেমন তাঁদের দারিদ্রতা দূর হচ্ছে, অন্যদিকে কর্মজীবনের ব্যস্ততায় যাঁরা ঘরে পিঠা বানিয়ে খাওয়ার সময় পান না, তাঁরাও স্বাদ নিতে পারছেন এসব সুস্বাদু পিঠার।

আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা হয় পৌর এলাকায় মহাসড়ক ঘেঁষে ভ্যানগাড়ির ওপর সাজিয়ে পিঠা বিক্রেতা হাফিজ উদ্দিনের। হাফিজ বলেন, ‘ ভাইরে আমার বাড়িত ভিডা-মাডিঢা (ভিটা-মাটি) ছাড়া কিচ্ছু নাই। এই পিডা (পিঠা) বিহির টেহা দিয়াই আমার সংসার চলতাছে। তয় গরমকালে তো আর পিডা চলেনা। তহন অন্যকিছু করে সংসার চালাইতে অয়’।

হাফিজ আরও বলেন, ‘শীতো আমার এহানে ভাপা পিডা, চিত পিডা, কলা পিডা, মেরা পিডা বেচি। কয়দিন ধইরা শীত বাড়নে বিহিকিনি (বেচাকেনা) বাড়ছে।’

এদিকে সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় দেখা যায়, পৌর এলাকার জয় বাংলা মোড়ে পঞ্চার্ধ্বো এক ব্যক্তি চৌকিতে বসে মাটির চুলোয় পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত। সামনেই বেশ কয়েকজন ক্রেতা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে চুলো থেকে কখন নামবে গরম-গরম পিঠা। কথা হয় ওই বিক্রেতার সঙ্গে। তার নাম হান্নান। সে এমনিতে পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তবে শীত এলেই তিনি মাছের ব্যবসা ছেড়ে এসব পিঠা বিক্রি করেন।

আলাপকালে হান্নান জানান, তাঁর এখানে পিঠার প্রচুর চাহিদা। বিশেষকরে ভাপা এবং মেরা পিঠার। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত বারোটা-একটা পর্যন্ত ৩০০ থেকে ৩৫০ টি মেরা পিঠা এবং ১৫০ থেকে ২০০ টি ভাপা পিঠা বিক্রি হয় তাঁর এখানে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসে তাঁর সুস্বাদু পিঠা খেতে।

হান্নান বলেন, ‘ভাপা পিডার লাইগ্যা ঢেকির কুডার চাউল লাগে। পত্তিদিন ৩ থেকে ৪ জন লোক এইডার পিছে শ্রম দিতে অয়। গড়ে সব খরচ বাদ দিয়ে পত্তিদিন ১ হাজার থাইক্ক্যা ১ হাজার ৫০০ টেহা পর্যন্ত লাভ তাহে।’

কথা হয় হান্নানের দোকানে পিঠা খেতে আসা শফিউল্লাহ সুমন নামে এক যুবকের সঙ্গে। সুমন বলেন, ‘শীতের সন্ধ্যায় মেরা এবং চিতই পিঠার সঙ্গে শর্ষের ভর্তা, মরিচের ভর্তা স্বাদে জিবে পানি আসে। আমি প্রায় সময়ই এখানে পিঠা খেতে আসি।’

কথা হয় আরেক ক্রেতা মনিরুল ইসলামের সঙ্গে। মনির বলেন, ‘১০ টাকায় ভাপা-চিতই এবং ৫ টাকায় সুস্বাদু মেরা পিঠা মিলছে। সঙ্গে কয়েক রকমের ভর্তাও। কোনো কোনো দিন খাওয়ার পর পরিবারের লোকজনের জন্যও নিয়ে যাই।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ ক্যাটাগরি অন্যান্য নিউজ