সরকারি নির্দেশ অমান্য করে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় উচ্চ মতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন (বোমা মেশিন) দিয়ে মাটির গভীর তলদেশ থেকে চলছে পাথর ও বালু উত্তোলনের মহাউৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত চলে এ কাজ।
পরবর্তীতে এসব পাথর ও বালু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষণ করে বিক্রি করার জন্য। ২০১০ সালে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু ও পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সরকার আইনপাস করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। এ উপজেলায় পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে ভয়াবহ তির শঙ্কা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য মেশিন মালিকদের যোগসাজসে দেদারছে চলছে এ অবৈধ কার্যক্রম। প্রতি রাতে পাথর উত্তোলনের জন্য প্রত্যেক মেশিন মালিক লাইন নেওয়ার নামে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেয় বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যক্তিরা জানান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সন্ধ্যা হলেই পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা, সানিয়াজান , সিংগীমারী নদী ও সমতল ফসলি জমি, পুকুর, খালে বসানো হয় ড্রেজার মেশিন । ভূ-গর্ভস্থ থেকে পাথর ও বালু উত্তোলনে নদীগুলোর নাব্যতা এবং গতিপথ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব নদী নালায় পরিণত হয়েছে। এতে করে শত শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার সরকারি, আধা সরকারি ভবন, সড়ক, রেললাইন, বুড়িমারী স্থলবন্দর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সেতু চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। পাথর ও বালু পরিবহনে নিযুক্ত ট্রলি ও ট্রাক চলাচলের কারণে উপজেলার আঞ্চলিক পাকা ও আধাপাকা সড়কসহ চলাচলের বিভিন্ন রাস্তা নষ্ট হয়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর জানান।
পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এ উপজেলা থেকে বেশ ক’টি নদী হারিয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন অনেকে। পাথর উত্তোলনের গভীর খাদে পড়ে শিার্থীসহ ১০ থেকে ১৫ জন মারা গেছেন।
বাউরা পূনম চাঁদ ভুতোরিয়া কলেজের প্রভাষক মাহবুবুর রহমান সোয়েব বলেন, ‘পাথর ও বালুবাহী ট্রলির কারণে এলাকার সড়ক গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে এসব অবৈধ গাড়ি চলায় অভিভাবকেরা সন্তানদেরকে স্কুল কলেজে পাঠাতে ভয়ে থাকেন।’
স্থানীয় একজন মেশিন মালিক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘রাতে পাথর ও বালু তোলার জন্য মেশিন চালু করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে ১০ হাজার করে টাকা দিতে হয়। না হলে গিয়ে মেশিন ও পাইপ ভেঙ্গে দেয়।’
স্থানীয় বুড়িমারী ইউনিয়নের বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, ‘মেশিন চালু হলে স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানালে তাঁরা উল্টো মেশিন মালিকদেরকে বলে দেয়। পরবর্তীতে মেশিন মালিকরা আমাদেরকে নানান ভয়-ভীতি ও হুমকি দেয়। প্রশাসন যদি নিষেধ করে তাহলে কেউ মেশিন চালানোর সাহস পাবে না। প্রশাসনেরই কিছু সদস্যের মধ্যে ভেজাল রয়েছে।’
বুড়িমারী ইউনিয়নের বানিয়াডাঙ্গী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হুদা বলেন, ‘গত কয়েকদিন হতে ধরলা নদীতে বোমা মেশিন লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে ফসলের ক্ষতিসহ আবাদি জমি ভেঙে যাচ্ছে। মেশিন মালিককে বাধা দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ( ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘এ বিষয়ের কোন সত্যতা নাই।’
পাটগ্রাম উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আব্দুল ওয়াজেদ বলেন, ‘ইউএনও প্রশিক্ষনের জন্য বিদেশে গেছেন। পাথর তোলার ড্রেজার মেশিন বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে।’