সিংড়া (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের সিংড়ায় সরকারি খাল-বিল দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর। মঙ্গলবার ও বুধবার ৫৮ কিলোমিটার দখলমুক্ত করা হয়েছে। এসময় ২০ লক্ষ টাকার মাছ অবমুক্ত করা হয়। জব্দ করা হয়েছে চারটি শ্যালো মেশিন। একজন দখলদারকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চলনবিলের সরকারি খাল দখলমুক্ত করতে এ অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল ইমরান।
সিংড়া উপজেলার চৌগ্রাম ইউনিয়নের হুলহুলিয়া, সারদানগর খাল, ইটালী ইউনিয়নের তিশিখালি, সাঁতপুকুরিয়া ও তাজপুর ইউনিয়নের জয়নগরসহ প্রায় ৫৮ কিলোমিটার খালের মাটি ও বানার তৈরী অবৈধ বাধ অপসারণ করা হয়। এসময় ভুলু সরদার নামের একজনকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে চারটি শ্যালো মেশিন ও ৩০ ফিট পাইপ জব্দ করা হয়। সরকারি খাল দখলমুক্ত করে অবমুক্ত করা হয় প্রায় ২০ লক্ষ টাকার দেশি প্রজাতির মাছ।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (ক্ষুদ্র সেচ) সিংড়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাবনা-নাটোর-সিরাজগঞ্জ জেলায় ভূ-উপরিস্থ পানির মাধ্যমে সেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত তিন অর্থবছরে সরকারি অর্থায়নে চলনবিলের নাটোরের সিংড়া উপজেলা অংশে ১৫৪ কিলোমিটার খাল খনন ও পুনঃখনন করা হয়েছে।
বর্ষা মৌসুমে এসব খাল চলনবিলের পানির সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। বর্ষা শেষে বিলের পানি এসব খাল দিয়ে নদীতে নেমে যায়। বিলের সব দেশি প্রজাতির মাছ আশ্রয় নেয় এসব খালে। খাল না শুকিয়ে এসব মাছ ধরার অধিকার রয়েছে সাধারণ মানুষের। খালের পানি সেচে বোরো ধানসহ চৈতালি ফসল ফলানোর সুযোগও রয়েছে। ভূ-উপরিস্থ এই পানি ব্যবহার করায় ভূগর্ভস্থ পানির চাপ হ্রাস পায়। এতে মাটির মান স্বাভাবিক থাকে।
সূত্র আরও জানায়, গত তিন অর্থবছরে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫৪ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করেছেন। এতে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহারের মাধ্যমে সেচসুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। কৃষকেরা স্বল্প খরচে সেচসুবিধা পাচ্ছেন।
কিন্তু প্রকল্পের এসব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে স্থানীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের খাল দখলের মধ্য দিয়ে। প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করে বাঁধ দিয়ে দিচ্ছেন। খালের পানি সেচে মাছসহ জলজ প্রাণী নিধন করছেন তাঁরা। কৃষকেরা সেচসুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন এসব খাল থেকে মাছ ধরতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে অর্থের বিনিময়ে খাল কিনে নিয়ে মাছ ধরছেন তাঁরা। এ বিষয়টি নজরে আসলে অভিযানে নামে প্রশাসন।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহাদত হোসেন, বিএডিসি সিংড়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মানিক রতন প্রমূখ।