সময় খবর ডেস্ক:
দেশের স্বাস্থ্যখাতের মানোন্নয়নে নার্সদের শিক্ষা ও পেশাগত দক্ষতার বাড়ানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিগতভাবেও তাদেরকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা খুবই জরুরী বলে মত দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এছাড়া নার্সিং পেশার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে প্রয়োজন তাদের যথাযথ সম্মান, মূল্যায়ন ও নিরাপত্তা। দিবসটি পালন উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন বক্তারা।
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উপলক্ষে আয়াত এডুকেশন ও আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস এর যৌথ উদ্যোগে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।
আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ এই প্রতিপাদ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক নার্স দিবসটি পালিত হয়েছে রাজধানীর গুলশানের হোটেল আমারী ঢাকা-তে অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন আয়াত এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালক মাকসুরা নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়েবেটিক সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা.মো. শফিকুল আলম চৌধুরী।
গোলটেবির বৈঠকে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুুস, এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক ড. আরিফ মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. গাউসিয়া ওয়াহিদুন্নেসা চৌধুরী, আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস এর অধ্যক্ষ হালিমা আক্তার, জেপিজিএসপিএইচ এর হেড অব মিডওয়াইফারি ড. শারমিন রহমান, কোয়াটার ইন্টারন্যাশনাল এর প্রোনার্স প্রকল্পের টিম লিডার সেলিনা আমিন, গ্রামীণ ক্যালেডোনিয়ান কলেজ অব নার্সিং এর অধ্যক্ষ নীরু শামসুন নাহার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সিং সুপারিন্টেন্ডেড কারিমা খাতুন, নিয়ানার এর ফেকাল্টি মো. শরীফুল ইসলাম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্কয়ার নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ নাসিমা খাতুন, ইউনিক নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ তেরেজা বারৈ, মহাখালী কলেজ অব নার্সিং এর অধ্যক্ষ খোদেজা খাতুন প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালনক মাকসুরা নূর বলেন, একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার প্রতি নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেজন্য নার্সদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে। স্বাগত বক্তব্যে তিনি দেশের চাহিদার তুলনায় নার্স সঙ্কটের বিষয়ে তার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেন।
আয়াত এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতের মানোন্নয়ন ও নার্সদের স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলতে নার্সিং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সিমুলেশন ল্যাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য নার্সদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রযুক্তিগতভাবেও আরও দক্ষ ও অভিজ্ঞ করতে হবে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দেশে নার্সদের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুবই জরুরী।
আয়াত এডুকেশন মূলত আয়াত কলেজ অব নার্সিং এন্ড হেল্থ সায়েন্সেস, আয়াত কেয়ার, আয়াত স্কিলস ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও ডিগনিফাইং লাইফ (প্যালিয়েটিভ কেয়ার) প্রোগ্রাম এই চারটি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান।
বক্তারা বলেন, আধুনিকায়নের সাথে তাল মিলিয়ে নার্সদের দক্ষ করতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কারণ একজন রোগীকে সুস্থ্য করতে চিকিৎসকের চেয়েও নার্স কোন অংশে কম ভুমিকা পালন করেন না। নার্সরা ২৪ ঘন্টারই রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও দক্ষ নার্স এর তীব্র সঙ্কট রয়েছে। এখানে নার্সের তূলনায় চিকিৎসকের সংখ্যাই বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী যথাযথভাবে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য দেশে প্রতিটি চিকিৎসকের বিপরীতে চারজন নার্স থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের ১ জন চিকিৎসকের জন্য রয়েছে ১জনেরও কম নার্স (মাত্র ০.৭৪ জন)।
এই সঙ্কটের মূল কারণ হচ্ছে, সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অনেক সীমাবদ্ধ নীতিমালা, সাংস্কৃতিক বাধা, নার্সদের অনির্ধারিত মর্যাদা, তাদের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব, উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অভাব এবং সর্বোপরি নার্সিং শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তার অভাব।