মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ)
নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ঠিকই, তবে সেটি এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। এর আগেই ফাটল ধরেছে মেঝেতে এবং খসে পরছে ভবনের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা।
ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
এ অবস্থায় নবনির্মিত ভবনটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় তা বুঝে নিচ্ছেনা কর্তৃপক্ষ। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নে অবস্থিত ১০৯ নম্বর গোল্লাজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘসময় ধরে বিদ্যালয়টির শ্রেণি কক্ষের সংকটে পুরোনো একটি ভবনের দুইটি কক্ষে চলছে ছয় শ্রেণির পাঠদান। এতে একদিকে যেমন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের অন্যদিকে বিঘ্নিত হচ্ছে বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, নবনির্মিত ভবনটির মেঝের বিভিন্ন অংশ এবং সিঁড়িতে ফাটল ধরেছে। বিদ্যালয়ের ব্ল্যাকবোর্ড ও মেঝের অনেক স্থান থেকে পলেস্তারাও খসে উঠে পরেছে।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। প্রায় অর্ধশত বছর আগে স্থাপিত হওয়া সেই ভবনটি এখন পুরোনো এবং জরাজীর্ণ হয়েছে। জরাজীর্ণ ভবনের মোট তিনটি কক্ষের দুইটিতে গাদাগাদি করে চলে ছয়টি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম ,অপরটি ব্যবহার হচ্ছে অফিস কক্ষ হিসেবে।
বিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা যায়, চাহিদা ভিত্তিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে
গোল্লাজয়পুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরির কাজ শুরু হয়।
৪র্থ তলা ভবনটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয় ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার ৯৬১ টাকা। ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় দেওয়া হয় আব্দুল কুদ্দুস নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। চুক্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। তবে ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভবনটি হস্তান্তরের কথা থাকলেও ত্রুটিবিচ্যুতির কারণে তা এখনো পর্যন্ত বুঝে নেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে স্কুল ভবন নির্মাণের ঠিকাদার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে সোহান বলেন, ‘ ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার আগেই আব্বা মারা যান। পরে বাকি কাজটি আমিই সম্পন্ন করেছি।
এ অবস্থায় ভবনের মেঝের ওপরের অংশে সিমেন্ট কড়া (কঠিন) হওয়ার কারণে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। ফাটল ও খসে পড়া মেঝে দ্রুত মেরামত করে হস্তান্তর করা হবে।’
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়টির পুরনো ভবনের তিনটি কক্ষ রয়েছে। যার একটি অফিস কক্ষ আর দুটিতে খুবই গাদাগাদি করে চলে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে পর্যন্ত ছয় শ্রেণির কার্যক্রম। এমন দুর্ভোগ অবস্থাতেও নতুন ভবনটিতে উঠতে পারছিনা। তার কারণ ভবনটির মেঝের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে এবং পলেস্তারা খসে পরছে। এ বিষয়ে ইউএনও এবং শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে’।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নীলুফার হাকিম বলেন, ‘ ভবনের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা শুনেছি। এবিষয়ে একটি অভিযোগও পেয়েছি। এখনো ভবনটি হস্তান্তর করা হয়নি। আমি এখন ছুটিতে আছি, বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব’।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী তৌহিদ আহমেদ বলেন, ‘নবনির্মিত ভবনের ফাটলের বিষয়টি জেনেছি। মেঝেতে পর্যাপ্ত পানির অভাবে অনেক সময় ফেটে যায়। আর ভবন নির্মাণ সম্পন্নের এক বছর পর্যন্ত ভবনের যতো ধরনের সমস্যা হবে তা ঠিকাদার নিজ খরচে করে দিবে। ত্রুটিপূর্ণ স্থানগুলো দ্রুত মেরামত করে অচিরেই ভবন হস্তান্তর করা হবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ভবনটি হস্তান্তরের আগে ত্রুটিপূর্ণ স্থানগুলো ভালোভাবে মেরামত করে দ্রুত হস্তান্তর করতে সংশ্লিষ্টদেরকে বলা হয়েছে।’