মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চলমান ডিউটি রেখে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগ উঠেছে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানার বিরুদ্ধে।
গত ( ২৭ মে) শনিবার সরেজমিনে এর সত্যতাও পাওয়া যায়।
শুধু একদিন-দুদিন নয়, অধিকাংশ সময়েই হাসপাতালের রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর করেই তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগ রয়েছে সোহেল রানার বিরুদ্ধে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানার ডিউটি ছিল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে। কিন্তু তিনি ২টায় হাসপাতালের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেই চলে যান পৌর সদরের ব্রীজ সংলগ্ন ফয়সাল মেডিসিন কর্ণারের নিজস্ব চেম্বারে। ওই সময় বেলা আড়াইটার দিকে সরেজমিন গিয়ে তাকে ওই চেম্বারে জিসান (৪ মাস) নামে এক শিশু রোগীর প্রেসক্রিপশন করতে দেখা যায়।
প্রেসক্রিপশনটি হাতে নিয়ে দেখা যায়, তার নামের আগে ডা. মো. সোহেল রানা লেখা। শুধু তা-ই নয়, মেডিসিন, চর্ম, যৌন, মা ও শিশু এবং মানসিক রোগের বিশেষ অভিজ্ঞ বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই প্যাডে। মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত ফয়সাল মেডিসিন কর্ণারে রোগী দেখে আসছেন বলে জানান চেম্বারের আশপাশের ব্যবসায়িরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্ব রেখে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল রানা জানান, তার ডিউটি দুপুর ২ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। তিনি দুধ কিনতে বাজারে এসেছিলেন। এমন সময় একজন গরীব রোগী তাকে অনুরোধ করলে তিনি চেম্বারে বসে তার প্রেসক্রিপশন করে দেন।
তবে শিশু জিসানের মা রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমি কেন তাঁকে (সোহেল রানাকে) আমার বাচ্চা দেখার জন্য অনুরোধ করবো। বরং আমি এসে উনাকে চেম্বারেই পেয়েছি। পরে ২০০ টাকা দিয়ে আমার বাচ্চাকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন করিয়েছি।’
এদিকে গতকাল শনিবার বিকেল ফের হাসপাতালে জরুরী বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল ৫টা পর্যন্ত সোহেল রানা ডিউটিতে ছিলেন না। এ সময় জরুরী বিভাগে উপস্থিত চিকিৎসক সাকিবেরর কাছে সোহেল রানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সোহেল খেতে গেছেন। ওই সময় হাসপাতালে সাংবাদিক গেছে শুনে দ্রুত হাসপাতালে উপস্থিত হন সোহেল রানা। তখন তিনি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানান, ‘বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল এ্যাক্ট-২০১০ এর ২৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, নূন্যতম এমবিবিএস অথবা বিডিএস ডিগ্রীধারী ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার পদবী ব্যবহার করতে পারবেন না। যদি কোন ব্যক্তি এই বিধি লঙ্ঘন করেন তাহলে তা একটি অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এর জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির ৩ (তিন) বছর কারাদণ্ড বা ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।’
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল হক বলেন, ‘কর্তব্যরত অবস্থায় বাহিরে চেম্বার করা অন্যায়। তাছাড়া তার প্রেসক্রিপশনেরর মধ্যে ডা. শব্দটি লিখতে পারেন না। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লোপা চৌধুরী বলেন ‘ডিউটি চলমান অবস্থায় বাহিরে চেম্বার করার কোন নিয়ম নেই। যদি করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে কথা বলে বিষয়টা খতিয়ে দেখে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা দেখবো।’