জ.ই পরশ, ভৈরব প্রতিনিধি:
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী ভৈরব উপজেলার পানাউল্লাহরচর ও বেলাব উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের খেয়াঘাটে হেলিকপ্টার অবতরণ করে পাঁচ শতাধিক নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধাকে নির্বিচারে হত্যা করেছিলেন।
বর্তমানে ব্রম্মপুত্র নদের দুই পাড়েই বদ্ধভূমি হিসেবে সংরক্ষিত রয়েছে। যুদ্ধের সময় এখনে পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার অবতরণ করার খবরে মানুষজন পালিয়ে যেত।
আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর ঐতিহাসিক সেই জায়গায় হেলিকপ্টার অবতরণের খবরে বদ্ধভূমি মাঠে আনুমানিক দশ সহস্রাধিক মানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়।
ইব্রাহিমপুরের কৃতী সন্তান লন্ডন প্রবাসী আলহাজ্ব ডা: হেলাল তালুকদার পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ গ্রামে হেলিকপ্টারযোগে গ্রামে ফেরার কয়েক ঘন্টা আগে থেকেই বদ্ধভূমি মাঠের চারপাশ, রাস্তাঘাট মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়।
প্রচন্ড রোদ উপেক্ষা করে হাজার হাজার উৎসুক জনতা প্রিয় মানুষকে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন ঘন্টার পর ঘন্টা। এসময় গ্রামের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন লন্ডন প্রবাসী হেলাল তালুকদার ও তার পরিবার।
আজ বৃহস্পতিবার পৌনে ১টার দিকে ইব্রাহিমপুর গ্রামের মৃত ইদুল তালুকদারের পুত্র লন্ডন প্রবাসী ডা: হেলাল তালুকদার ও তার পরিবারের সদস্যদের বহনকারী এস.আলম গ্রুপের একটি হেলিকপ্টার বদ্ধভূমি মাঠে অবতরণ করেন।
এসময় লন্ডন প্রবাসী হেলাল তালুকদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা হেলিকাপ্টার থেকে নামার পর গ্রামবাসী লোকজন তাদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন। তখন হাজার হাজার এলাকাবাসীর ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি ও তার পরিবার।
পরে তিনি গ্রামবাসীর উদ্দেশ্য বক্তব্য দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এলাকার মানুষের আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পরে তিনি ইব্রাহিমপুর তালুকদার একতা ক্লাবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
এসময় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। হেলাল তালুকদারের আগমন উপলক্ষে মাঠের পাশে ভাসমান মেলার আয়োজন করেন গ্রামের যুবকরা।
হেলাল তালুকদার বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও কাছ থেকে কখনো হেলিকপ্টার দেখেনি গ্রামের মানুষজন। তাই গ্রামের মানুষের মনের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে হেলিকপ্টার নিয়ে গ্রামে আসি।
লন্ডন থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর সেখান থেকে বেলা সোয়া ১২টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হই। গ্রামে ফিরে হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা পেয়ে আমি সত্যি ধন্য হয়েছি। তাই সল্লাবাদ ইউনিয়নবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
উল্লেখ্য, লন্ডন প্রবাসী আলহাজ্ব ডা: হেলাল তালুকদার দীর্ঘ ৩০ বছর আগে প্রবাসে পাড়ি জমান। প্রথমে ইতালিতে বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি লন্ডনের পাসপোর্টধারী হিসেবে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন পরিবার পরিজন নিয়ে।
বর্তমানে তিনি বাকিং এন্ড ডেগনহাম বাংলাদেশী কমিউনিটি (বিডিভিসি) লন্ডনের সেক্রেটারি। কয়েক বছর পর পর সে নিজে গ্রামে আসলেও এই প্রথম পরিবার পরিজন নিয়ে তার গ্রামে আসা।