পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি গরু পারাপারকারী যুবকের লাশ ফেরত দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ২ মাস ১৮ দিন পর এ লাশ ফেরত দিল ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
গত ০৪ জুন দিবাগত রাত ২ টা ৩০ মিনিটে পাটগ্রাম ইউনিয়নের শেষ ও জগতবেড় ইউনিয়নের শুরু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলিতে নিহতের ঘটনা ঘটে। সীমান্তের ৮৫৭ নম্বর প্রধান পিলারের ১৩ নম্বর উপপিলারের ভারতের সরকারপাড়া ও বাংলাদেশের কালীরহাট এলাকা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু পারাপারকারীদের সহায়তায় বাংলাদেশি গরু পারাপারকারীসহ উভয় দেশের ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল গরু পারাপারের চেষ্টা করতে থাকে।
এ সময় ভারতীয় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ১৬৯ রাণীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মীররাপা ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা ভারত-বাংলাদেশের গরু পারাপারকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এতে ইউছুফ আলীর পেটে ও হাতে গুলি লেগে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ইউছুফের বাড়ি জগতবেড় ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের মেছেরডাঙ্গা এলাকায়। বাবার নাম শাহ জামাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সীমান্তে নিহতের লাশ ফেরত চেয়ে ইউছুফের বাবা শাহ জামাল ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নে আবেদন করেন। বিজিবি উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর গত ২/৩ দিন আগে লাশ ফেরত দেওয়ার কথা জানায় ভারতীয় বিএসএফ।
আজ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেল জগতবেড় ইউনিয়নের নাজির গোমানী সীমান্তের বিকেল ৪ টায় সীমান্তের ৮৬৮ নম্বর প্রধান ও ৩ নম্বর উপপিলারের নিকট দিয়ে ইউছুফের লাশ ফেরত দেয়া হয়।
এ সময় ভারতীয় কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ ১৬৯ রাণীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের শ্রিমুখ ক্যাম্পের কমান্ডার অরবিন্দ কুমার, কুচবিহার একজন ম্যাজিস্ট্রেট, মেখলিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেমন্ত মুখার্জি, বাংলাদেশের পক্ষে ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নাজিরগুমানী ক্যাম্পের কমান্ডার সুবেদার রেজাউল করিম, জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুব রহমান, জগতবেড়র ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন প্রমুখ।
জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল, ‘উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি-বিএসএফ), ভারতের একজন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে নিহত বাংলাদেশি যুবক ইউছুফের লাশ তাঁর বাবার নিকট তুলে দেওয়া হয়।’
পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাবুব রহমান বলেন, ‘ইউছুফের লাশ হস্তান্তরের সময় ভারতের বিএসএফ, মেখলিগঞ্জ থানা পুলিশ, ওই দেশের একজন ম্যাজিস্ট্রেট ছিল। বাংলাদেশের বিজিবি, পুলিশ, জগতবেড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, মেম্বর ও নিহতের বাবা শাহ জামাল ও ছোট ভাই উপস্থিত ছিল। লাশ বুঝে নিয়ে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।’
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ তিস্তা ব্যাটালিয়ন-২ (৬১ বিজিবি) এর উপঅধিনায়ক মেজর নাজমুস সাকিব বলেন, ‘ভারতের পুলিশ, বিএসএফ, অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশের পুলিশ, বিজিবি, গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং নিহত ব্যক্তির স্বজনদের উপস্থিতিতে লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ভারতীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এনওসি (অনাপত্তিপত্র) ছাড়া লাশ দিতে চায়নি। আমরা বলেছি পূর্বে এনওসি ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হয়েছিল- এ কারণে লাশ হস্তান্তরে সময় নেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।’