মহিউদ্দিন রানা, নিজস্ব প্রতিবেদক (ময়মনসিংহ):
ভালুকায় একটি পোষাক কারখানায় কাজ করার সুবাদে প্রায় চার বছর আগে ফারুক মিয়ার (২৮) সঙ্গে এক সন্তানের জননী মোছা. সুমি আক্তারের (২২) পরিচয় হয়। এরপর দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই অবস্থায় গত এক বছর ধরে বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক মেলামেশাসহ স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করছিলেন।
এ অবস্থায় ফারুক তরুণিকে বলে তাঁর স্বামীকে তালাক দিলে তবেই সে তাঁকে বিয়ে করবে । ফারুকের কথায় ওই তরুণি তাঁর স্বামীকে গত কয়েকদিন আগে তালাক দেয়। কিন্তু এরপর থেকে ফারুক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। ওই অবস্থায় অনেক খোঁজাখোঁজির পর ফারুককে না পেয়ে। বিয়ের দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে ফারুকের বাড়িতে এসে অবস্থান নেন ওই তরুণি। এদিকে তরুণি আসার পর বাড়ি থেকে কৌশলে পালিয়ে যায় ফারুক।
সরেজমিনে গিয়ে ফারুকের বাড়িতে অবস্থান নিতে ওই তরুণিকে পাওয়া যায়, এ প্রসঙ্গে কথা হলে সুমি আক্তার নামে ওই তরুণিসহ স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা এসব তথ্য জানান।
সুমি আক্তারের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার পাইসকা ইউনিয়নের ধরচন্দ্রবাড়ি এলাকায়। সে ওই এলাকার আব্দুল মালেকের মেয়ে। অপরদিকে ফারুকের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের সাগুলী গ্রামে। সে ওই এলাকার মো. আবু বকরের ছেলে।
বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অবস্থান নেওয়া সুমি বলেন, ‘ফারুক আমাকে বলেছে স্বামী-সন্তান ছেড়ে আসলে আমাকে বিয়ে করবে। আমি তাঁর কথায় সব করেছি। এখন সে আমাকে বিয়ে না করলে আমার মরণ ছাড়া উপায় নাই’।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘এর আগেও আরও বেশ কয়েকবার ওই তরুণিকে ফারুক তাঁদের বাড়ি আসে। আমরা জানতে চাইলে ফারুক জানায় এটা তাঁর প্রেমিকা, বিয়ে ঠিকঠাক। বাবা-মাকে দেখানোর জন্যই নিয়ে আসি’।
স্থানীয়রা আরও জানান, বাড়িতে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে তরুণিকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে ফারুকের বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। পরে কথা হয় তাঁর মা মোছা. সেলিনা আক্তারের সঙ্গে। সেলিনা বলেন, ‘ আমরা কোন নির্যাতন করছিনা। এগুলো মিথ্যাকথা। আমার ছেলে কোথায় আছে বলতে পারিনা। এই মেয়ে অবিবাহিত হলে চিন্তা করে দেখতাম, বিবাহিত মেয়েকে জীবনেও আমার ঘরের বউ করবোনা।’
তবে এর আগেও ছেলের সঙ্গে বাড়িতে আসার বিষয়টি স্বীকার করেন ফারুকে মা।
এ বিষয়ে জাটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক ঝন্টু বলেন ‘ওই মেয়ে গতকাল আমার পরিষদে এসেছিল। সবকিছু শোনার পর এবং মেয়ের কাছ থেকে কিছু প্রমাণ দেখার পর ছেলের অভিভাবকে উভয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা বলি। কিন্তু বিবাহিত হওয়ায় এই শর্তে তাঁরা রাজি হয়নি। পরে আমি মেয়েকে আইনের আশ্রয় নিতে বলি।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মাজেদুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’